Monday, March 22, 2021

মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়!


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার লেখনিতে বলেছিলেন 'মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়'; আসলেই মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়, আর এক্ষেত্রে তিনি স্বার্থ বলতে হীনস্বার্থকে বুঝিয়েছিলেন। এখন আমি এই বিষয়টিকে একটু জুম করে বলতে চাই। মানুষের রুচিবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি যখন স্বার্থের লেভেল ক্রস করে হীনস্বার্থের দিকে পড়ে তখন সে অন্ধ হয়ে যায়। কারণ মানুষ যখন কোনো সুস্বাদু জিনিসের স্বাদ পেয়ে যায় তখন সে ভোগের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। খেয়াল করে দেখবেন যে, বাংলাদেশে যেসব ভণ্ড পীরের আস্তানা রয়েছে সেখানে অন্ধ মুরিদেরা পীরকে সেজদাহ্ করে। এটি ইসলামে নিষিদ্ধ এবং এটি যে নিষিদ্ধ সেটা হয়তো সেই অন্ধ ভক্তরা না জানলেও তথাকথিত পীরেরা কিন্তু একথা ঠিকই জানেন। জানার পরেও তারা এটিকে বন্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না, কারণ তারা বিকৃত মস্তিষ্কের সম্মান লাভের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছেন যেখানে মুরিদেরা তাদের এতোটাই ভক্তি করেন যেরূপ ভক্তি অন্য ধর্মাবলম্বীরা দেবতাদেরকে করে থাকে সেরূপ ভক্তি করেন; আর এরূপ ভক্তি পেয়ে পেয়ে তাদের নেশা হয়ে গেছে। এই সুস্বাদু জিনিস ভোগ করার নেশায় তারা এমনভাবে মত্ত হয়ে গেছে যে, 'সার্ভিস হোল্ডার' নাটকের অভিনয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেছিলেন, "অফিসে 'স্যার' ডাক শুনতে শুনতে আমার এমন অভ্যাস হয়ে গেছে, এখন কেউ 'ভাই' বলে ডাকলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়" সেরকম অবস্থা।
তারা জানে এটি নিষিদ্ধ এবং এই কাজ করতে দিলে যে তাদেরকে নরকে যেতে হবে এটাও তারা জানে; জানার পরেও তারা এটা থেকে সরে আসছে না কারণ এই সুস্বাদু জিনিসের তাৎক্ষণিক ভোগের নেশা তাদেরকে অন্ধ বানিয়ে দিয়েছে। এই নেশা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারছেন না।
এটা তো গেলো ধর্মব্যবসায়ীদের লেভেল। বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন তার জেল জীবনের কথায় সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যখ্যা দিয়ে। অধিকারের আন্দোলন করায় রাজনৈতিক হীনস্বার্থের বলি হয়ে বঙ্গবন্ধুকে বহুদিন কারাভোগ করতে হয়েছিল। বহুদিন না দেখায় ফলে এবং চেহারা অত্যাধিক ভেঙে পড়ায় তখন তার শিশুসন্তান তাকে চিনতে পারছিলো না। কারামুক্তির পর বাড়ি ফিরলে তার সন্তান শেখ কামাল শেখ হাসিনাকে বলেছিল, "হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি"। এদেশের স্বার্থের আন্দোলন করায় হীনস্বর্থের বলি হয়ে তাকে এই ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল।
দেশের বিষয়, ধর্মের বিষয় ছাড়াও সমাজ, পরিবার, ব্যক্তি সব লেভেলেই এটি সত্য যে মানুষ হীনস্বার্থবাদীতার চর্চা করতে গিয়ে অন্ধ হয়ে যায়। এই অন্ধত্ব থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ বেরিয়ে আসতে পারবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে হীনস্বার্থ ভোগ করা থেকে নিজেকে মুক্ত করে পরিশুদ্ধ হতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মানুষ নামের দাবীদার নয়। কিন্তু তারাও দেখতে মানুষের মতো বলেই এবং অভিধানে তাদের আলাদা কোনো নাম না থাকায় বলা হয় 'মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়'; আসলে মানুষ হীনস্বার্থের প্রতি আকৃষ্ট হলে অন্ধ ও অমানুষ হয়ে যায়।
পারিবারিক জীবনে অংশীদারীত্বের সম্পর্কযুক্ত মানুষগুলো কীভাবে হীনস্বার্থের জন্য অন্ধ ও অমানুষ হয়ে যায় এবং নিজের আপনজনকে পথে বসাতেও দ্বিধা করে না তা আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনাতে উল্লেখ করেছি। আমার আত্মীয়রা তাদের হীনস্বার্থের জন্য কীভাবে আমাকে পথে বসিয়েছে তা জানতে পারলেই তোমরা অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের লাইফ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন ও সতর্ক হতে পারবে।

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



লাইফের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ-পরামর্শ পেতে লাইফ একাডেমির অ্যাডভইস ডেক্সে আসুন। আর Advice Desk এর ওয়েবসাইটের হোমপেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন

সুন্দর জীবনের জন্য পরামর্শ | Advice Desk

Monday, March 15, 2021

সবাই সফলতার কৃতিত্বের অংশীদার হতে চায় কিন্তু কেহই ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করতে চায় না!


পরিবার থেকে শুরু করে সর্বত্র সবক্ষেত্রেই একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, মানুষ সবাই সফলতার কৃতিত্ব নিতে চায় কিন্তু কেহই ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করতে চায় না। যেমন বর্তমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তথা স্কুল-কলেজগুলোতে বেশিরভাগ স্কুল-কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষকই প্রাইভেট পড়ানো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং দেখা যায় যে প্রাইভেট পড়ানো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ শিক্ষকই যেসব শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট পড়ান তাদেরকে প্রাইভেটে খুব সুন্দর করে পড়াশুনার বিষয়বস্তুগুলো শিখিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই একই শিক্ষক স্কুলের ক্লাসে শিক্ষার্থীদেরকে মোটেও ততটা সুন্দরভাবে সেই জিনিসগুলো শেখান না। এজন্য বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাইভেট পড়া জিনিসটা আবশ্যিক হয়ে গেছে; কারণ ওই যে ক্লাসে ভালো না পড়ানোর সেই ঘাটতির জায়গাটা প্রাইভেট পড়েই পূরণ করতে হয়। এখন দেখবেন যে, প্রতিষ্ঠানের অবদানে পরীক্ষায় ভালো করেছে এমন দৃষ্টান্ত খুবই কম; শহরে এবং বিত্তশালী পরিবারে থাকে টিউশনির শিক্ষক আর গ্রামে ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য থাকে প্রাইভেট ব্যাচ। স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষায় ভালো ফলাফল হয় না। কিন্তু দেখবেন যে, যেসব শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়ে পরীক্ষায় ভালো করেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা এটাকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে গ্রহণ করে থাকে; কিন্তু যে শিক্ষার্থীগুলো শুধু স্কুল-কলেজের ক্লাসের পড়াশুনার উপর নির্ভরশীল ছিল এবং প্রাইভেট পড়তে পারেনি বলে পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি তাদের সেই ব্যর্থতার দায়ভারের ভাগ কিন্তু কোনো শিক্ষকই নিতে চায় না; অথচ তাদেরকে পড়ানোর দায়িত্বটা ছিল তাদেরই উপরে, প্রাইভেট পড়া তো একস্ট্রা বিষয়। স্কুলে তাদের শেখানোর দ্বারা যদি স্কুলের ফলাফল ভালো হয় সেই কৃতিত্বের দাবীদার শিক্ষকরা হতে পারেন; প্রাইভেট পড়ে ভালো করা শিক্ষার্থীদের সফলতার কৃতিত্বের দাবীদার তারা নন। অথচ প্রাইভেট পড়ে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের সফলতার কৃতিত্ব তারা নিতে আগ্রহী কিন্তু যেটা তাদের রিয়েল রেজাল্ট অর্থাৎ প্রাইভেট না পড়া ছেলেমেয়েগুলোর মন্দ রেজাল্ট আর এর পেছনে যে তাদেরও আংশিক দায়ভার আছে সেটা তারা স্বীকার করতে চান না, এটাকে তারা পুরোটাই সেসব শিক্ষার্থীদের নিজেদের ব্যর্থতা ও অক্ষমতা হিসেবে দেখেন।
ছাত্র ভালো করলে শিক্ষক কৃতিত্ব নেন, কিন্তু ছাত্র খারাপ করলে শিক্ষক তার দায়ভারের ভাগ নিতে চান না।
পরিবারেও একই ঘটনা ঘটে থাকে। পরিবারের কেউ সফলতা লাভ করলে তার কৃতিত্ব পরিবারের সবাই নিয়ে থাকে, এবং এটা নেওয়াটা তাদের অধিকার; কারণ একজন মানুষের সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান থাকে তার পরিবারের। আবার তেমনিভাবে কারও কোনো কাজে ব্যর্থতার পেছনেও পারিবারিক অবস্থারও প্রভাব থাকে আর এক্ষেত্রে সেই ব্যর্থতার দায়ভারের ভাগ পরিবারের কেউ নিতে চায় না, এটাকে পুরোপুরি তার নিজের ব্যর্থতা ও নিজের অক্ষমতা হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। কেউ যদি সফল হয় তাকে নিয়ে সবাই গর্ব করে ও সেই সফলতার পেছনে নিজের কী কী অবদান আছে তা বলে থাকে, কিন্তু কোনো পরিবারে কেউ খারাপ করলে তার ব্যর্থতার পেছনে নিজেদের কোন কোন সীমাবদ্ধতা, অসহযোগিতা ও অবহেলা ছিল তা স্বীকার করে ব্যর্থতার দায়ভারের ভাগ নিতে চায় না।
কেউ যদি লাইফে সফলতা ও ব্যর্থতা এই দুটোরই স্বাদ পেয়ে থাকেন তাহলে সে এই বিষয়টা ভালো করে দেখেছে; একই মানুষগুলো একই মুখে দুই রকমের কথা বলে, সফল হলে একরকম আর ব্যর্থ হলে আরেক রকম।
আমার পারসোনাল লাইফেও আমি এই জিনিসটা খুব বেশি ফেস করেছি। আমার শর্ট টাইম মেমোরি লস সমস্যার কারণে আমি গত কয়েক বছর ধরে কোনো পরীক্ষায় ভালো করতে পারছি না। আমার এই ব্রেইনের সমস্যার সুত্রপাত পারিবারিক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণেই। আর এই সমস্যা ওভারকাম করার জন্য আমার একটা যে ধরণের অনুকূল পরিবেশ দরকার সেরূপ পরিবেশ পাওয়ার মতো উপায়ও নেই। আমার এই সমস্যা সৃষ্টির দায়ভার পরিবার নেবে না, এমনকি এ থেকে ওভারকামেও আমাকে হেল্প করবে না।
এই পৃথিবীর সবাই সফলতার কৃতিত্বের অংশীদার হতে চায় কিন্তু কেহই ব্যর্থতার দায়ভারের ভাগ নিতে চায় না।
তাই কামিনী রায়ের সেই মহান কবিতার কথা ভুলে যাও। আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন; আজকের দিনে যার জন্য নিজের স্বার্থ ত্যাগ করবে সেই উল্টো আঘাত করবে। নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে হতেম তাই হলে তাদের লাথি-গুতো খেতে হবে। আর, একবার অধিকার সচেতন হয়ে জীবনে সফল হয়ে দেখুন অন্যরা কতটা সমীহ করে এবং ভালোবাসে। এযুগে স্বার্থ ত্যাগ করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না, বরং উল্টো অবহেলা ও তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়।

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



আপনি কি স্মার্ট ইংরেজি শিখতে চান?
কিংবা,
ইংরেজিতে স্মার্ট রেজাল্ট করতে চান?

তাহলে,
দেখুন আমাদের প্যাকেজসমূহ:

[] Academic Package (JSC, SSC & HSC)
[] Standard Package (Speaking, Writing & Translating)
[] Competitive Package (For "Competitive English")

আমাদের এ প্রজেক্টের টপিকসমূহের নোট দেখতে এখানে—ক্লিক—করুন

English Grammar Learning System (EGLS)

"100% Updated English Learning System for Professional English"

Learn English Easily |
LIFE English Learning Program

Sunday, March 14, 2021

ভদ্র ছেলেদের জীবন অনেক কষ্টের হয়!


ভদ্র ছেলেরা লাইফের শুরুতে অনেক প্রশংসা পায়। তাই তারা ধরেই নেয় যে এই প্রশংসা পাওয়ার মতোই মনে হয় তারা তাদের লাইফের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সাপোর্টও পাবে। কিন্তু লাইফের একটা নির্দিষ্ট বয়সে গিয়ে তাদের এই ভুল বিশ্বাস ভেঙে যায় এবং তারা বুঝতে পারে যে, জীবনে ভদ্র ছেলে হয়ে শুধু প্রশংসাই পাওয়া যায়, কোনো সাপোর্ট পাওয়া যায় না; অধিকন্তু যখন ভদ্র ছেলেরা অন্যের কাছে প্রশংসা পেয়ে মানুষকে বিশ্বাস করে থাকে এই সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আশেপাশের লোকজন তাদেরকে ঠকিয়ে থাকে এবং তারা ভদ্র ছেলে হওয়ায় একটি কাল্পনিক ভুল বিশ্বাসের কারণে তারা এই ঠকানোর প্রতিবাদ করে না; আর এটাই হয় তাদের আত্নশক্তি ও নিজস্ব সত্তার ভাঙনের শুরু। যেহেতু তারা লাইফের শুরুতে প্রশংসা পেয়েছে তাই তারা ভেবেই বসে যে আমাকে অল্প একটু ঠকালেও সকলে আমার পাশে আছে আর আমি এক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে চুপ থাকলে আমাকে আরও বেশি ভালোবাসবে এবং দুর্দিনে আমার পাশে থাকবে। কিন্তু লাইফের ক্লান্তিকালে এসে তারা বুঝতে পারে যে, ভালো-ভদ্র ছেলে হয়ে লাইফে প্রশংসাই শুধু পাওয়া যায় সাপোর্ট জিনিসটা পাওয়া যায় না অর্থাৎ অধিকার আদায় করে নিতে হয়, অধিকার কেউ কাউকে দেয় না। তাই এই ভুল বিশ্বাস থেকে যখন কোনো ভদ্র থেকে যথাসময়ে বেরিয়ে আসতে পারবে তখন থেকেই সে তার লাইফের আত্মপ্রতিষ্ঠার বীজ বপন করে ফেলবে এবং লাইফে সফল হতে সক্ষম হবে।
আর যারা এটা বুঝেও সাহসের অভাবে কিছু করতে পারবে না তারা জেনে রাখো যে ভদ্র ছেলেদের জীবন অনেক কষ্টময়, অবহেলাপূর্ণ, দুর্গতিময় ও বিড়ম্বনায়ময় হয়; কারণ সবাই তাদের নিয়ে খেলে থাকে; তাদেরকে ভালো কেউ বাসে না। 
আসলে এই 'ভালোবাসা' শব্দটাই হচ্ছে একটা ধোঁকা এবং জীবনের গতি থামিয়ে দেওয়ার একটি ভ্রান্ত ধারণা। জগতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই। এই জগতের প্রতিটি মানুষ তিনটি জিনিসের চর্চা করে তা হলো— স্বার্থবাদ, সুবিধাবাদ এবং কর্তৃত্ববাদ। এই জিনিসটা ভদ্র ছেলেরা অনেক দেরিতে বুঝতে পারে। ততদিনে তাদের লাইফ থেকে মূল্যবান অনেক কিছু হারিয়ে যায়।
এভাবে ভদ্র ছেলেদের জীবনটা অনেক রূঢ়, শুষ্ক ও ধুসর-বিবর্ণ হয়ে থাকে। হুমায়ূন আহমেদের একটা উক্তি আছে— "ভদ্র ছেলেদের জন্য মেয়েদের অন্তরে কখনও ভালোবাসা জন্মায় না, যেটা জন্মে সেটা হলো সহানুভূতি"; মেয়েদের অন্তরে তো তাও সহানুভূতি জন্মে, অন্যান্য মানুষদের অন্তরে সেটাও জন্মে না।

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



গিভ অ্যান্ড টেক | A book of self development

মুখবন্ধ
•••••••••
মাতৃস্নেহ অতুলনীয়, বাবার মতো বন্ধু কেউ নেই, পরিবার সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা হেন তেন— এইসব কথাবার্তা হলো ভুয়া এবং অতিরঞ্জিত কথাবার্তা। এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, সবাই স্বার্থবাদী এবং সুবিধাবাদী— এই সত্যটা যে যত দ্রুত বুঝতে পারবে তার জন্য ততই মঙ্গল। এই পৃথিবীর সবাই চলে 'গিফ অ্যান্ড টেক' পলিসিতে; সবাই তোমার কাছে কিছু জিনিস প্রত্যাশা করে, আর সেই প্রত্যাশা নিয়েই তোমার উপর ইনভেস্ট করে। তুমি যদি সময়মতো সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারো তাহলেই বুঝবে তোমার প্রতি ইনভেস্ট করাটা ভালোবাসার দান ছিল নাকি প্রত্যাশার ইনভেস্ট ছিল। তুমি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে তোমাকে দোষারোপ করা হবে; তুমি কী কারণে পারো নাই তা কেউ বুঝতে চাইবে না; ভুল বোঝার জন্য অনেকে থাকে, কিন্তু পরিস্থিতি বোঝার জন্য কেউ থাকে না। নিজের একান্ত দুর্দিনে কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না। বাবা-মা, অমুক মামা, অমুক খালু, অমুক আঙ্কেল, অমুক ভাই-তমুক ভাই, অমুক বন্ধু-তমুক বন্ধু কাউকেই তখন পাশে পাওয়া যায় না।
প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই একটা সংকটময় সময় থাকে। তোমার জীবনে  সেই দুঃসময়টা যেদিন আসবে সেদিন থেকে তুমি পরিপূর্ণ ও সক্ষম মানুষ হতে শিখবে, সেদিন তুমি বুঝবে যে তুমি আসলে কে? অমুকের ছেলে বা মেয়ে, অমুকের ভাতিজা, অমুকের ভাই, অমুকের বন্ধু, ব্লা ব্লা— এসব কোনোটাই কাজে আসে না। তুমি আসলেই একা এবং তোমার নিজের পথ তোমাকে একাই গড়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের জ্ঞানবুদ্ধি, সাহস ও কর্মসক্ষমতাই একমাত্র সহায়ক হিসেবে কাজে আসে।
দেখা যায় ভদ্র ছেলেদের লাইফ অনেক কষ্টের হয়, কারণ তারা এই সত্যটা অনেক দেরিতে বুঝতে পারে। শৈশবে দুষ্টু থাকা ছেলেগুলো অল্প বয়সে ভুল করে ও এর দ্বারা বুঝে যায় তার কাছের মানুষগুলো আসলেই তার কতটা কাছের এবং সেই মাফিক লাইফ সাজিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ভদ্র ছেলেগুলো এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে শেখে অনেক দেরিতে।
এন্টিবায়োটিকের ডোজ কম্পিলিট না করলে দুর্বল হয়ে থেকে বেঁচে যাওয়া ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া যেমন পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের গঠন চেঞ্জ করে ফেলে নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলে, এই বইটি পড়লে সেইসব পরিস্থিতিতে থাকা তরুণরা যারা এখনও জানে না ভবিষ্যতে তাদের সাথে কী ঘটতে চলেছে সেইসব ছেলেমেয়েরাও নিজেদের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে শিখবে ও নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য সেইভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
তাই এরূপ বিভিন্ন কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তানদের লাইফের বিভিন্ন পরিস্থিতি গবেষণা করে তা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য পন্থা ও পদ্ধতি নিয়ে এই বইটি লেখা হয়েছে। বইটি সে সকল ছেলেমেয়েদের উপকারে এলে আমাদের এই পরিশ্রম ও প্রয়াস সার্থক হবে।

বইটি প্রি-অর্ডার করতে বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'টাইম পাবলিকেশন্স' এর ফেসবুক পেজের মেসেজ ইনবক্সে মেসেজ করুন। সম্পূর্ণ বই লেখা হলেই আমরা আপনাকে রিপ্লাই দিবো।
টাইম পাবলিকেশন্স এর ফেসবুক পেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন

টাইম পাবলিকেশন্স | A Publication of Life Academy

Saturday, March 13, 2021

পারিপার্শ্বিক অবস্থা যেভাবে আমাকে বদলে দিলো!


আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে বললেন আমি নাকি খুব উগ্র হয়ে গেছি। হ্যা, কথাটা সত্য; এটা স্বীকার করতে আমার সমস্যা নাই। তবে আমি যে একসময় খুবই শান্ত ও ভদ্র ছিলাম যেরকম শান্ত-ভদ্র ছেলে হাজারে একজন পাওয়া যায় সেইরকম একজন ছেলে ছিলাম একথা তিনি বিশ্বাস করলেন না।
তাহলে তো আমাকে বলতেই হয় কীভাবে আমি এতো শক্ত, উগ্র ও ইস্পাত কঠিন হয়ে গেলাম তার কিছু সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত। আর সেসব বলার আগে আমার শৈশব ও কৈশোরের নরম মন-মানসিকতার কিছু নমুনা তুলে ধরি। একবার কোনো একদিন বাবা আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে হাটে গেলেন। মাছের বাজারে নদীর কিছু দেশী মাছ বিক্রি হওয়া প্রায় শেষ, স্টকের শেষ মাছটুকু বাবা কিনলেন, অন্য একজন কিনতে এসে আর পেলেন না। আমার ইচ্ছে হলো মাছগুলো তাকে দিয়ে দেওয়া হোক, যেহেতু সে নিতে আশা করেছে। অথচ আমরা আগে নিয়েছি এবং এটাই আমাদের অধিকার— এই সত্য-সঙ্গত অধিকারের দম্ভ টুকুও আমার ছিল না; এতো নরম-কোমল মন নিয়ে ছিলাম।
কখনও যদি মানুষের আঘাতে পা ভেঙে যাওয়া কোনো কুকুর চোখে পড়তো সেই অবোলা প্রাণিটার কষ্টে দুঃখ পেয়ে কয়েকঘণ্টা মনমরা ও ব্যথিত হয়ে থাকতাম। কোনো পশুপাখি মরে পড়ে আছে কিংবা কোনো পাখি বৃষ্টিতে ভিজে কাঁপছে কিংবা আঘাত পেয়েছে দেখলে কী কষ্টটাই না পেতাম। কোনো পঙ্গু মানুষকে দেখলে তার কষ্টের দুঃখ কয়েকদিন ধরে আমাকে তাড়া করে বেড়াতো।
এককথায় মানুষ বা কোনো প্রাণির কোনো কষ্ট দেখলে খুব ব্যথিত হয়ে যেতাম।
এসব তো গেলো আমার কোমল মনের বিষয়বস্তুর কথা; এখন বলতে হয় আমার শৈশবের ভীরুতা সম্পর্কে। আমি যে কতটা ভিতুর ডিম এবং বোকা ও আত্নবোধহীন ছিলাম তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। কেউ অন্যায়ভাবে আমাকে কিছু বললে বা কিছু করলে আমি তা মেনে নিতাম এবং সেটা যে অন্যায় করা হচ্ছে এবং এর যে প্রতিবাদ করা যায় তাও আমি বুঝতাম না।
সেইসাথে আমি শৈশবে আমার সমবয়সীদের অকাজের শাস্তির ভাগীদার হতাম। তাদের সাথে যখন ঘুরতে যেতাম তারা এটা সেটা অকাজ করতো; আমি তাদের সেসব থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতাম এবং তখন নিজে সৎ থাকতে আমি সেই কাজে অংশ না নিয়ে সেখান থেকে চলে আসতাম। অথচ উল্টো যখন সেই ক্ষতি যে ব্যক্তির হয়েছে সে যখন তাদের কাউকে ধরে বসতো তখন তারা আমার নামে দোষ চাপিয়ে বলতো যে আমি ওই কাজটা শুরু করেছি। এভাবে অন্যদের মন্দ কাজের দোষের ভাগী হতে হতো কোনো দোষ না করেই। আর আমার পরিবারের অভিভাবক আবার ওদের কথাই বিশ্বাস করে মহান বিচারক সেজে আমার শাস্তির ব্যবস্থা করতো। সাহস দেখিয়ে যে ওদের এই হীন কাজের শিক্ষা এদের দিবো সেই সাহস ও বুদ্ধিও পেতাম না। এভাবে তিক্ত অভিজ্ঞতা হতে থাকায় আমি অন্যান্য সমবয়সী কিশোরদের সাথে ঘোরাফেরা বন্ধ করে দেই। ফলে আমি সামাজিকীকরণে পিছিয়ে পড়ি এবং প্রবল অন্তর্মুখী হয়ে যাই।
আমি সবসময় সত্য কথা বলতাম এবং এখনও বলি। আমি সত্যবাদী ছিলাম কিন্তু সৎসাহসী ছিলাম না। যে কাজটা আমি করি নাই তবুও যদি একবারের বেশি বারবার কয়েকবার জিজ্ঞেস করতো যে আমি সেটা করেছি কি না? তখন এই বারবার করা একই প্রশ্ন সহ্য করতে না পেরে সেই কাজ না করেও স্বীকার করতাম যে আমি সেটা করেছি। কিন্তু এখন আর তা করি না। সত্য কথা একবার বলার পর আবার কেউ একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে এতো বেশি রেগে যাই যে পুনরায় এক কথা তোলার সাহস কেউ করে না।
আমার কঠিন হওয়ার শুরু সরলতার বিশ্বাস ভঙ্গ হওয়া থেকে। আমি খুবই সরল মনের মানুষ ছিলাম। কেউ কিছু বুঝালে সুবোধ বালকের মতো তা বুঝতাম। কিন্তু লাইফে বহুবার যখন দেখলাম যে সেসব কোনো ভালো বুঝ ছিল না, ছিল শুধু স্বার্থবাদীতার প্রয়োগ তখন থেকে সেসব লোককে শ্রদ্ধা সমীহ করা বন্ধ করতে শুরু করলাম।
এরপর আমার লাইফের চাওয়াপাওয়া ও প্রত্যাশাগুলোকে একে একে ধামাচাপা পড়তে দেখলাম। মানুষজাতি ও মানব সমাজের অনেক কপটতা, কুটিলতা ও বহুরূপতা দেখলাম। ছোটোবেলার জেনে আসা অনেক নীতিকথা ভুল প্রমাণিত হতে দেখলাম। উপরের সৌন্দর্য ও মধু'র ভিতরে কুৎসিত রূপ ও বিষ লুকিয়ে থাকা দেখলাম। দেখলাম প্রতিটি মানুষই লাইফে অন্যের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করে কিন্তু নিজেকে অন্যের ক্ষেত্রে সেরূপ ডেডিকেটেড করে না বরং নিজে স্বার্থবাদ, সুবিধাবাদ এবং কতৃত্ত্ববাদ এই তিনটা জিনিসের চর্চা করে।
লাইফে অন্যের সহযোগিতা পাওয়ার পরিবর্তে পেলাম কুলুপবাজি, সমালোচনা এবং সান্ত্বনা।
সেইসাথে কোমল মনের চর্চা সাহিত্য পড়া বাদ দিয়ে কঠিন বাস্তবতার বিষয়বস্তু পড়া শুরু করলাম। তাই এখন আমি আর অন্যদের ভুংভাং কথা সুবোধ বালকের মতো মেনে নেই না বলে অভদ্র, উগ্র সাব্যস্ত হয়ে মানুষের সমালোচনার উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হলাম। অবশ্য এতে আমি ঘাবড়াই না।
এপিজে আবদুল কালাম বলেছিলেন, "সামনে দাঁড়িয়ে পথ দেখানোর কেউ নেই, পাশে দাঁড়িয়ে ভরসা দেওয়ার কেউ নেই, কিন্তু পেছনে দাঁড়িয়ে সমালোচনা করার লোকের অভাব নেই"।
ডেল কার্নেগী বলেছিলেন, "বাহিরে থেকে কারও সমালোচনা করা যতটা সহজ তার জায়গায় দাঁড়িয়ে তার পরিস্থিতি বোঝা ততটাই কঠিন"।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, "নিন্দা করতে গেলে বাইরে থেকে করা যায়, কিন্তু বিচার করতে গেলে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়"।
আমি জানি বিচার করার মতো মানসিকতা অন্য জাতির থাকলেও বাঙালি জাতির নেই। সমালোচনা হলো বাঙালির একটি প্রিয় মুখরোচক খাবার।
বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে সমালোচনা করার একটি নীতি আছে তা হলো একটা বিষয়ে ভালোভাবে জেনে তারপর তারা সমালোচনা করে, কিন্তু বাংলাদেশে এর উল্টো; এখানে সেই কয়েক অন্ধের হাতি দেখা গল্পের মতো বাঙালি কোনোকিছুর ১০% জেনেই তাতে কমেন্ট করে। সেসব দেশসমূহে সমালোচনা করতে যোগত্যা লাগে আর বাংলাদেশে কারো সমালোচনা করতে গেলে নিজের মুর্খতাই যথেষ্ট।
সেই শৈশবের বিনা অপরাধে দোষের ভাগী হওয়ার কথাগুলো আমার এখন কখনও কখনও মনে পড়লেও সেগুলো কোনো দুঃখ উৎপাদন করে না। কিন্তু তরুণ বয়সের কিছু নিরপরাধ দুর্ভোগ আমাকে বেশ কঠিন মানুষ বানিয়ে দিলো। সেসব আমি আমার অন্য একটা লেখায় লিখেছি। ইচ্ছে হয় অপরাধ না করেও যখন গত ১০ বছরে অনেকের করে যাওয়া অপরাধের শাস্তির ভাগ ভোগ করলাম তাহলে এখন সেই অগ্রিম শাস্তি গুলোর অপরাধ করে সেটা পুষিয়ে দেই।
হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, "মানুষ শুধু শুধুই কঠিন হয় না, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও বর্তমানের পরিস্থিতি তাকে কঠিন হতে বাধ্য করে"।
আমি আমার লাইফে প্রথমে আমার স্বপ্নগুলোকে হারালাম, তারপর আমি আমার ভালোবাসাকে হারালাম এবং সর্বশেষ আমি একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার মতো পরিবেশটাও হারালাম। তো আমি উগ্র হবো না তো কী হবো?

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



গিভ অ্যান্ড টেক | A book of self development

মুখবন্ধ
•••••••••
মাতৃস্নেহ অতুলনীয়, বাবার মতো বন্ধু কেউ নেই, পরিবার সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা হেন তেন— এইসব কথাবার্তা হলো ভুয়া এবং অতিরঞ্জিত কথাবার্তা। এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, সবাই স্বার্থবাদী এবং সুবিধাবাদী— এই সত্যটা যে যত দ্রুত বুঝতে পারবে তার জন্য ততই মঙ্গল। এই পৃথিবীর সবাই চলে 'গিফ অ্যান্ড টেক' পলিসিতে; সবাই তোমার কাছে কিছু জিনিস প্রত্যাশা করে, আর সেই প্রত্যাশা নিয়েই তোমার উপর ইনভেস্ট করে। তুমি যদি সময়মতো সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারো তাহলেই বুঝবে তোমার প্রতি ইনভেস্ট করাটা ভালোবাসার দান ছিল নাকি প্রত্যাশার ইনভেস্ট ছিল। তুমি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে তোমাকে দোষারোপ করা হবে; তুমি কী কারণে পারো নাই তা কেউ বুঝতে চাইবে না; ভুল বোঝার জন্য অনেকে থাকে, কিন্তু পরিস্থিতি বোঝার জন্য কেউ থাকে না। নিজের একান্ত দুর্দিনে কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না। বাবা-মা, অমুক মামা, অমুক খালু, অমুক আঙ্কেল, অমুক ভাই-তমুক ভাই, অমুক বন্ধু-তমুক বন্ধু কাউকেই তখন পাশে পাওয়া যায় না।
প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই একটা সংকটময় সময় থাকে। তোমার জীবনে  সেই দুঃসময়টা যেদিন আসবে সেদিন থেকে তুমি পরিপূর্ণ ও সক্ষম মানুষ হতে শিখবে, সেদিন তুমি বুঝবে যে তুমি আসলে কে? অমুকের ছেলে বা মেয়ে, অমুকের ভাতিজা, অমুকের ভাই, অমুকের বন্ধু, ব্লা ব্লা— এসব কোনোটাই কাজে আসে না। তুমি আসলেই একা এবং তোমার নিজের পথ তোমাকে একাই গড়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের জ্ঞানবুদ্ধি, সাহস ও কর্মসক্ষমতাই একমাত্র সহায়ক হিসেবে কাজে আসে।
দেখা যায় ভদ্র ছেলেদের লাইফ অনেক কষ্টের হয়, কারণ তারা এই সত্যটা অনেক দেরিতে বুঝতে পারে। শৈশবে দুষ্টু থাকা ছেলেগুলো অল্প বয়সে ভুল করে ও এর দ্বারা বুঝে যায় তার কাছের মানুষগুলো আসলেই তার কতটা কাছের এবং সেই মাফিক লাইফ সাজিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ভদ্র ছেলেগুলো এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে শেখে অনেক দেরিতে।
এন্টিবায়োটিকের ডোজ কম্পিলিট না করলে দুর্বল হয়ে থেকে বেঁচে যাওয়া ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া যেমন পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের গঠন চেঞ্জ করে ফেলে নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলে, এই বইটি পড়লে সেইসব পরিস্থিতিতে থাকা তরুণরা যারা এখনও জানে না ভবিষ্যতে তাদের সাথে কী ঘটতে চলেছে সেইসব ছেলেমেয়েরাও নিজেদের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে শিখবে ও নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য সেইভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
তাই এরূপ বিভিন্ন কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তানদের লাইফের বিভিন্ন পরিস্থিতি গবেষণা করে তা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য পন্থা ও পদ্ধতি নিয়ে এই বইটি লেখা হয়েছে। বইটি সে সকল ছেলেমেয়েদের উপকারে এলে আমাদের এই পরিশ্রম ও প্রয়াস সার্থক হবে।

বইটি প্রি-অর্ডার করতে বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'টাইম পাবলিকেশন্স' এর ফেসবুক পেজের মেসেজ ইনবক্সে মেসেজ করুন। সম্পূর্ণ বই লেখা হলেই আমরা আপনাকে রিপ্লাই দিবো।
টাইম পাবলিকেশন্স এর ফেসবুক পেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন

টাইম পাবলিকেশন্স | A Publication of Life Academy

Friday, March 12, 2021

Thursday, March 11, 2021

সম্পদের ঔদ্ধত্য এবং আমরা


আমি যদি ফিদেল কাস্ত্রোর মেয়ের নাম- ঠিকানা জানতাম তাহলে তাকে চিঠি লিখে বলতাম, "তুমিই ভুল, তোমার বাবাই ঠিক ছিল"।
আমি ব্যক্তিগতভাবে অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে হলেও সমাজতন্ত্রের মতো একটি বদ্ধ ব্যবস্থার গুণগান কেনো গাইছি তা এই লেখায় ব্যাখ্যা করবো।

যে আমেরিকা ৬৩৮ বার ফিদেল কাস্ত্রোকে মারার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় ফিদেল কাস্ত্রোর মেয়ে বাবার উপর অভিমান করে দেশ ছেড়ে সেই আমেরিকাতে গিয়ে বসবাস করছে, সে ধনতন্ত্রের সমর্থক, অবাক ব্যক্তিস্বাধীনতার সমর্থক। কিন্তু আমরা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এই কাল্পনিক অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বাদ কতটা পাচ্ছি তাই এখন দেখার বিষয়। আসুন দেখে নিই আমরা সেই অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতার সুখ কতটা পাচ্ছি!

অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে বুঝায় গণতন্ত্র। উন্নত বিশ্বের গণতন্ত্র সফল, কিন্তু অনুন্নত বিশ্বে গণতন্ত্র এক মেরুদণ্ডহীন স্বপ্নের নাম; যে স্বপ্নের শুরু জন্মের পরে আর মৃত্যুর পূর্বেও তার স্পর্শ লাভ করার সৌভাগ্য আমাদের হয় না।

অনুন্নত বিশ্বে গণতন্ত্র সর্বসাধারণের স্বাধীনতা নয় বরং পরিণত হয়েছে মুষ্টিমেয় অভিজাত শ্রেণির অতি অবাধ স্বাধীনতা লাভের হাতিয়ারে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্র উদ্ভব হয়েছে কতৃত্ববাদের। আর শুধু এই কতৃত্ববাদীরাই লাভ করছে সেই অবাধ মুক্ত ব্যক্তিস্বাধীনতা। আর বাকিরা পরিণত হয়েছে তাদের পীড়নের শিকারে।

অনুন্নত বিশ্বের ব্যর্থ গণতন্ত্র আমাদেরকে জাতীয় জীবনে উপহার দিয়েছে আইনশৃঙ্খলার দুর্গতি ও বিচারহীনতা। ফলে নিরাপত্তার শঙ্কা এবং মতামত প্রকাশের ও অন্যয়ের প্রতিবাদের ক্ষেত্রেও হামলার ভয়। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে হারিয়ে গেছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। তাহলে আর সুস্থ নাগরিক জীবনের কোন জিনিসটা বাকি থাকলো?

অনুন্নত বিশ্বে যেখানে আমার ব্যক্তিসম্মান নাই, জানমালের নিরাপত্তা নাই, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই, সুবিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা নাই সেখানে কাল্পনিক ব্যক্তিস্বাধীনতা দিয়ে আমি কী করবো?

সমাজতন্ত্রের দেশগুলোতে বেকারত্বের সমস্যা থাকেনা। তারা বেকার সমস্যা সমাধানে কী ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে তা চীন, রাশিয়া, কিউবার ইতিহাস পড়লে বুঝতে পারবেন। তাই তাদের তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনাময় সময়টা আনপ্রডাক্টিভ কাজে ব্যয় হয় না, সেটার সদ্ব্যবহার হয়। আর অনুন্নত বিশ্বের ব্যর্থ গণতন্ত্রের দেশে নিয়োগ বোর্ড ও সরকারি কোষাগার বেকারদের রক্ত চুষে জোঁকের মতো ফুলে ফেপে উঠে। তরুণদের সম্ভাবনাময় সময়টা ব্যয় হয় বেকারত্ব নামক হতাশায়।

এসব তো গেলো বড় পরিসরের কথা। এখন আরেকটু গভীরে ঢুকি, পরিবারে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারী হওয়ায় ক্ষমতায় পরিবারের কর্তা কতৃত্ববাদী হয়ে উঠে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর; হয় নারী নির্যাতন ও শিশু নির্যাতন অধিকন্তু শিশুদের উপর মানসিক নির্যাতন।
ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষকে পাশবিক করে তোলে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির কারণে পাওয়ারফুল হয়ে স্বামী স্ত্রীকে নির্যাতন করে, বাবা-মা সন্তানকে নির্যাতন করে। আমি মোটেও গাঁজাখুরি কথা বলছি না, নিজ চোখে দেখা বাস্তবতা তুলে ধরছি।

এবার এর সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে বলি। এর ফলে সমাজের বিত্তশালীরা কতৃত্ববাদী ও চড়াও হয়ে উঠে সমাজের সাধারণের উপর। বিষয়টা বুঝানোর জন্য প্রথমেই একটা গল্প বলে নিই-
আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম। মেয়েটার পরিবার বিদেশে (মধ্যপ্রাচ্যে) ওডজব করে অনেক টাকার মালিক হয়। ফলে তারা বিনয়ী হওয়ার পরিবর্তে কতৃত্ববাদী হয়ে উঠে। সেই সময়ে তারা এক পয়সাওয়ালা বরের সন্ধান পায় ও যেও মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে ধনী হয়েছিল। তার সাথেই মেয়েটার বিয়ে হয়। তারা জানতো ছেলেটা এইচএসসি পাশ, কিন্তু ঘটক ঘুষ খেয়েছিল। ছেলেটা কোনো পড়াশুনাই করেনি। অন্যদিকে মেয়েটা এইচএসসি পাশ করে ভর্তি প্রত্যাশী। ফলে বিয়েটা টেকেনি।
যাহোক ডিভোর্সের পরেও আমি মেয়েটাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। তখন মেয়েটার নানা আমাদের গ্রামে এসে কিছু লোকের কাছে আমাদের সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলে গেছে। আমি নাকি তাদের মেয়ের যোগ্যই নই। অথচ তাদের মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফরম তোলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি। আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও তার যোগ্য নই! আর একজন এইচএসসি পাশ করেই তার যোগ্য ছিল, কারণ তার টাকা ছিল।
আমার এক বন্ধু একবার আমাকে বলেছিল, "একটা বিষয় দেখো, তুমি ভালো না মন্দ সমাজে তা নির্ণয় করা হবে তোমার সম্পদ দিয়ে। মনে করো তুমি একটা পরিচিত লোককে তাদের মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলা তাহলে সেই লোকটা কী করবে জানো?
যদি তোমার সম্পদ না থাকে তাহলে সেই লোকটা অন্যদের কাছে বলে বেড়াবে, অমুকের ছেলেটাকে ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু এ ভিতরে ভিতরে এত খারাপ ভাবতেও পারিনি...; আর যদি তোমার সম্পদ থাকে তাহলে বলবে, যাক বাহে পরিচিতর মাঝেই একজন ভালো ছেলে পেলাম, আর দূরে যাই কেনো? এখানেই বিয়েটা দেই।
তার মানে তুমি ভালো নাকি মন্দ তা ঠিক করা হচ্ছে তোমার সম্পদের উপর ভিত্তি করে, সততার উপর ভিত্তি করে নয়।"
এভাবেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষের মানবিক বোধগুলোকে ধ্বংস করছে; মানুষ কতৃত্ববাদী ও অমানুষ হয়ে যাচ্ছে।

উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা বইয়ে কোনো এক গল্পে একটা উক্তি পড়েছিলাম- "হাতে বন্দুক থাকলে নিরীহ মানুষেরও চোখ পড়ে পশুপাক্ষীর দিকে"। ঠিক তেমনি অনুন্নত বিশ্বে গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উপহার ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষকে কতৃত্ববাদী করে তোলে আর শুধু কতৃত্ববাদীরা সুবিধা ভোগ করে।

ফলে ব্যক্তির কেনো সম্পত্তি থাকবে? সম্পত্তি থাকবে রাষ্ট্রের ও রাষ্ট্র তার নাগরিকদের পারফরমেন্স অনুযায়ী তাকে আরও ভালো করার জন্য বোনাস ও সাপোর্ট দেবে। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠিত হবে।

তবে এটা ঠিক যে, আমাদের এসব কথা শুধুই ভুতের বকুনি। আমাদের আবস্থা প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া গরুর মতো। দেশে যতই উন্নয়ন উন্নয়ন গীতের ক্যাসেড বাজুক না কেনো নাগরিকদের মনে স্বস্তি না থাকলে এসব অর্থহীন।

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



লাইফের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ-পরামর্শ পেতে লাইফ একাডেমির অ্যাডভইস ডেক্সে আসুন। আর Advice Desk এর ওয়েবসাইটের হোমপেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন

সুন্দর জীবনের জন্য পরামর্শ | Advice Desk