বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার লেখনিতে বলেছিলেন 'মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়'; আসলেই মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়, আর এক্ষেত্রে তিনি স্বার্থ বলতে হীনস্বার্থকে বুঝিয়েছিলেন। এখন আমি এই বিষয়টিকে একটু জুম করে বলতে চাই। মানুষের রুচিবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি যখন স্বার্থের লেভেল ক্রস করে হীনস্বার্থের দিকে পড়ে তখন সে অন্ধ হয়ে যায়। কারণ মানুষ যখন কোনো সুস্বাদু জিনিসের স্বাদ পেয়ে যায় তখন সে ভোগের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। খেয়াল করে দেখবেন যে, বাংলাদেশে যেসব ভণ্ড পীরের আস্তানা রয়েছে সেখানে অন্ধ মুরিদেরা পীরকে সেজদাহ্ করে। এটি ইসলামে নিষিদ্ধ এবং এটি যে নিষিদ্ধ সেটা হয়তো সেই অন্ধ ভক্তরা না জানলেও তথাকথিত পীরেরা কিন্তু একথা ঠিকই জানেন। জানার পরেও তারা এটিকে বন্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না, কারণ তারা বিকৃত মস্তিষ্কের সম্মান লাভের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছেন যেখানে মুরিদেরা তাদের এতোটাই ভক্তি করেন যেরূপ ভক্তি অন্য ধর্মাবলম্বীরা দেবতাদেরকে করে থাকে সেরূপ ভক্তি করেন; আর এরূপ ভক্তি পেয়ে পেয়ে তাদের নেশা হয়ে গেছে। এই সুস্বাদু জিনিস ভোগ করার নেশায় তারা এমনভাবে মত্ত হয়ে গেছে যে, 'সার্ভিস হোল্ডার' নাটকের অভিনয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেছিলেন, "অফিসে 'স্যার' ডাক শুনতে শুনতে আমার এমন অভ্যাস হয়ে গেছে, এখন কেউ 'ভাই' বলে ডাকলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়" সেরকম অবস্থা।
তারা জানে এটি নিষিদ্ধ এবং এই কাজ করতে দিলে যে তাদেরকে নরকে যেতে হবে এটাও তারা জানে; জানার পরেও তারা এটা থেকে সরে আসছে না কারণ এই সুস্বাদু জিনিসের তাৎক্ষণিক ভোগের নেশা তাদেরকে অন্ধ বানিয়ে দিয়েছে। এই নেশা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারছেন না।
এটা তো গেলো ধর্মব্যবসায়ীদের লেভেল। বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন তার জেল জীবনের কথায় সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যখ্যা দিয়ে। অধিকারের আন্দোলন করায় রাজনৈতিক হীনস্বার্থের বলি হয়ে বঙ্গবন্ধুকে বহুদিন কারাভোগ করতে হয়েছিল। বহুদিন না দেখায় ফলে এবং চেহারা অত্যাধিক ভেঙে পড়ায় তখন তার শিশুসন্তান তাকে চিনতে পারছিলো না। কারামুক্তির পর বাড়ি ফিরলে তার সন্তান শেখ কামাল শেখ হাসিনাকে বলেছিল, "হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি"। এদেশের স্বার্থের আন্দোলন করায় হীনস্বর্থের বলি হয়ে তাকে এই ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল।
দেশের বিষয়, ধর্মের বিষয় ছাড়াও সমাজ, পরিবার, ব্যক্তি সব লেভেলেই এটি সত্য যে মানুষ হীনস্বার্থবাদীতার চর্চা করতে গিয়ে অন্ধ হয়ে যায়। এই অন্ধত্ব থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ বেরিয়ে আসতে পারবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে হীনস্বার্থ ভোগ করা থেকে নিজেকে মুক্ত করে পরিশুদ্ধ হতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মানুষ নামের দাবীদার নয়। কিন্তু তারাও দেখতে মানুষের মতো বলেই এবং অভিধানে তাদের আলাদা কোনো নাম না থাকায় বলা হয় 'মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়'; আসলে মানুষ হীনস্বার্থের প্রতি আকৃষ্ট হলে অন্ধ ও অমানুষ হয়ে যায়।
পারিবারিক জীবনে অংশীদারীত্বের সম্পর্কযুক্ত মানুষগুলো কীভাবে হীনস্বার্থের জন্য অন্ধ ও অমানুষ হয়ে যায় এবং নিজের আপনজনকে পথে বসাতেও দ্বিধা করে না তা আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনাতে উল্লেখ করেছি। আমার আত্মীয়রা তাদের হীনস্বার্থের জন্য কীভাবে আমাকে পথে বসিয়েছে তা জানতে পারলেই তোমরা অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের লাইফ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন ও সতর্ক হতে পারবে।
© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।
লাইফের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ-পরামর্শ পেতে লাইফ একাডেমির অ্যাডভইস ডেক্সে আসুন। আর Advice Desk এর ওয়েবসাইটের হোমপেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন।
সুন্দর জীবনের জন্য পরামর্শ | Advice Desk
No comments:
Post a Comment