Tuesday, May 25, 2021

মানুষের তথ্য বিকৃতির অভ্যাস আছে


আমি যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি সেটা ছিল ২০০৫ সাল। ওই সময়ে সারাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটা হইচই উঠলো যে এখন থেকে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করা হবে এবং সেইসাথে একটা বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে পড়েছিল সেটা হলো— এখন থেকে আর সায়েন্স-আর্টস-কমার্স কিছু থাকবে না, সবাইকে সবকিছুই পড়তে হবে। আসলে বিষয়টা মোটেও সেরকম কিছু ছিল না, সরকারের পক্ষ থেকে যেটা করা হয়েছিল সেটা হলো ওই সময়ে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করে Edexcel পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আসলে আমরা বর্তমানেও যে শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশুনা করছি এই শিক্ষাব্যবস্থাটা প্রণয়ন করা হয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল যেটার নাম ছিল কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন; এই শিক্ষা কমিশনের প্রধান ছিলেন কুদরত-ই-খুদা আর তার নেতৃত্বে সেই শিক্ষা কমিশন তখন তৎকালীন সময়ের ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার অনুকরণে বাংলাদেশে একটি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করলেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা তাদের শিক্ষাপদ্ধতিকে চেঞ্জ করে যুগোপযোগী করে একটি ডেভেলপড শিক্ষাপদ্ধতি চালু করেছে যেটি Edexcel শিক্ষাপদ্ধতি নামে পরিচিত, ও লেভেল, এ লেভেল এসব হলো সেই ডেভেলপকৃত শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ভার্সন। কিন্তু বাংলাদেশ সেরূপ কিছু না করে ব্রিটিশদের সেই পুরাতন শিক্ষাব্যবস্থার ঐতিহ্যকে অদ্যাবধি ধরে রেখেছে।
প্রসঙ্গে ফিরে আসি, ২০০৫ সালে সেই হইচইটা উঠলো যে এখন থেকে শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করা হবে এবং সায়েন্স-আর্টস-কমার্স এসব থাকবেনা। মানুষ এই কথা প্রচার করলেও সরকার কিন্তু আসলে এই কথা বলে নাই, সরকার বলেছিল Edexcel পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্তের কথা; আর Edexcel সিস্টেমে সায়েন্স-আর্টস-কমার্স বলে কিছু থাকে না, এখানে কিছু বেসিক নীতিমালা আছে যাতে একজন শিক্ষার্থী কিছু সায়েন্স এর সাবজেক্ট কিছু আর্টস এর সাবজেক্ট এবং কিছু কমার্স এর সাবজেক্ট এভাবেও পড়তে পারে; এটা হলো একটা উন্মুক্ত চয়েসে পড়াশোনার পদ্ধতি। এই উন্মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার নাম হলো Edexcel Education System; লিনাক্স যেমন কম্পিউটারের উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম তেমনি এটা ছিল একটি উন্মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা।
কিন্তু বিষয়টাকে এভাবে ব্যাখ্যা করে উপস্থাপন না করে তখন বাংলাদেশে বলাবলি শুরু হলো যে, এখন থেকে আর সায়েন্স-আর্টস-কমার্স এসব কিছু থাকবে না, সবাইকে সবকিছু পড়তে হবে। এমনকি সেই সময়ে আমার একজন শ্রদ্ধেয় সিনিয়র শিক্ষকও ক্লাসে এসে বলেছিলেন যে, এরপর তোমাদের সময় থেকে সায়েন্স-আর্টস কমার্স বলে কিছু থাকবে না, সবাইকে সবকিছু পড়তে হবে।
এ থেকে এটাই বুঝা গেলো যে মানুষ তার পরিশ্রম কমানোর জন্য অথবা সময় বাঁচানোর জন্য কিংবা সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্যকে বিকৃত করে যেটা খুবই বাজে একটা কাজ। কোনোকিছুকে গুছিয়ে বলতে হলে যদি বেশি সময়েরও প্রয়োজন হয় তবুও তথ্যকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা উচিৎ। উনি উনার কথাকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য এই কাজটা করেছিলেন কিন্তু কথাকে সংক্ষিপ্ত করতে গিয়ে তিনি প্রকৃত জিনিসটাকে বিকৃত করে ফেললেন যা একটা ভুল তথ্যতে পরিণত হয়ে ছড়িয়ে গেলো।

উপরোক্ত বিষয়টি ছিল সময় সেভ করতে গিয়ে নিজের অজান্তে ঘটে যাওয়া তথ্যবিকৃতি। এছাড়াও অন্য একটা বিষয় আছে সেটা হলো মানুষ উদ্দেশ্যমূলকভাবেও তথ্যকে বিকৃত করে থাকে। সেটার একটা উদাহরণ এখন দিবো। ২০১৪, ২০১৫ কিংবা ২০১৬ সালে হবে বিষয়টা; সেটা হলো সে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের "খ" ইউনিটের ভর্তিতে একটা নতুন নিয়ম সংযুক্ত করা হলো সেটা হলো দেশের যেসব শিক্ষার্থী ঢাবি "খ" ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ইংলিশ সাবজেক্ট পড়তে চায় তাদেরকে ভর্তি পরীক্ষায় 'বাংলা' অংশের পরিবর্তে Elective English এর উত্তর করতে হবে এবং তাতে পাশ করতে হবে। এর পূর্বে Elective English এর বিষয়টা ছিল যে, যারা বিদেশী শিক্ষার্থী হওয়ায় মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা পড়েনি কিংবা দেশের শিক্ষার্থী হয়েও দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশুনা না করে Edxcual সিস্টেমে O Level, A Level এ পড়েছে তারাই শুধু 'বাংলা' অংশের পরিবর্তে Elective English এর উত্তর করবে। এক্ষেত্রে Elective English এর উত্তর করার জন্য ইলেকটিভ ইংলিশ নির্দেশক একটি বৃত্তও ভরাট করতে হয় এবং Elective English এর কলামে এমসিকিউ উত্তর করতে হয়। এক্ষেত্রে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে ইংলিশ এর উত্তর করবে প্রশ্নপত্রে সেটার প্রশ্নমালার উপরে General English লেখা থাকে আর ইলেকটিভ ইংলিশ এর প্রশ্নমালার উপরে Elective English লেখা থাকে।
সে বছর শিক্ষার্থীরা বাস্তববাদী হয়েছিল বলে তারা ভেবেছিল যে, আমি যদি English Literature পড়ার স্বপ্নে বাংলা অংশ বাদে Elective English এর উত্তর করি এবং তাতে পাশ করতে না পারি তাহলে আমার ইংলিশ পড়ার স্বপ্ন তো গেলোই ঢাবি "খ" ইউনিটের অন্য ৩৭ টা সাবজেক্ট এর অন্য কোনো একটা পড়ার স্বপ্নও গেলো। কারণ Elective English হলো Advanced English; এটির প্রশ্ন General English এর তুলনায় বেশ কঠিন তথা Advanced লেভেলের। ফলে পরীক্ষার্থীরা এই রিস্ক নিতে যায় নি। তাই তারা English Literature পড়ার স্বপ্ন না দেখে বরং নিরাপদভাবে স্বপ্ন পূরণের জন্য এই রিস্কি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নি। মাত্র কয়েকজন প্রখর মেধাবী পরীক্ষার্থী English Literature পড়ার স্বপ্নে সাহস করে ঝুঁকি নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করেছিল এবং তাদের মধ্যে দুইজন সফল হয়েছিল কিংবা হয়তো সেই দুইজনও বিদেশী কিংবা ও-লেভেল, এ-লেভল পড়া শিক্ষার্থী ছিল। ফলে মাত্র সেই দুইজন English Literature এ ভর্তির শর্ত পূরণে সফল হয়েছিল। অথচ সাংবাদিকরা এটা নিয়ে খবরের শিরোনাম করলো 'ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে পাশ করলেন মাত্র দুইজন'!
বিষয়টা কিন্তু তা ছিল না, ইংলিশে কিন্তু পাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। কারণ যারা এই ঝুঁকি নেয়নি, অন্যান্য সাবজেক্ট পড়তে চেয়েছে তারা বাংলা অংশের উত্তর করেছে এবং General English এর উত্তর করেছে, তারা Elective English এর উত্তরটাই করে নাই, পাশ-ফেলের প্রশ্ন তো পরের হিসাব। এক্ষেত্রে সংবাদের এরূপ শিরোনাম বিভ্রান্তিকর।
এক্ষেত্রে এটার শিরোনাম করা উচিৎ ছিল— 'ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি সাহিত্যে ভর্তির শর্ত পূরণ করলেন মাত্র দুইজন'। সাংবাদিকরা পাঠক আকর্ষণের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই বিভ্রান্তিকর শিরোনাম করেছিল।

সুতরাং আমরা বরাবরই দেখে থাকি যে, মানুষ তার আয়াস লাঘব করার জন্য কিংবা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্যকে বিকৃত করে থাকে। তাই আমাদের জীবনে কোনো একটি তথ্য হুটহাটভাবে পেয়েছি বলেই যে আমরা সেটা নিয়ে উত্তেজিত হয়ে যাবো তা না করে বরং আমাদেরকে সেই বিষয়ে সুক্ষভাবে অনুসন্ধান করে সেটির সঠিকতা, স্বচ্ছতা ও যথাযথতা নিরূপণ করে জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Friday, April 30, 2021

ভার্সিটি, বেকারত্ব এবং সামাজিক বাস্তবতা!


পাবলিক ভার্সিটিতে না পড়লে এবং লাইফে এরূপ নিঃস্ব অবস্থায় না পড়লে হয়তো এটা জানাই সম্ভব হতো না যে জগতে কত প্রকারের ধান্দাবাজ ও স্বার্থবাজ থাকতে পারে। আর এই স্বর্থবাদীতা চর্চার যুগে এসে আমরা ভুলেই গেছি যে সহানুভূতি, সাহায্য, ভালোবাসা, ইত্যাদি কিছু হৃদয় ঠান্ডা করা জিনিসের চর্চা কোনো একদিন মানব জাতির মাঝেও ছিল। এমনও একটি সময় হয়তো ছিল যখন একটা মানুষ আরেকটা মানুষের কষ্ট বুঝতো। আর আজকাল তো মানুষের দুর্বল পয়েন্টে আঘাত করে নিজের হীনস্বার্থ হাসিল করাকে মানুষ নিজের বুদ্ধিমত্তা মনে করে।

আমি কয়দিন ধরে একটা প্রবন্ধ লিখতে চেয়েছিলাম যে প্রবন্ধের নাম হবে "মৃত্যু"। মানুষের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয় The bath of a man is not any simple matter; মৃত্যু মানে একটা মানুষের চিরবিদায়। তার সাথে সকল ধরণের যোগাযোগ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। ইচ্ছে হলেও আর চলে যাওয়া মানুষটার সাথে দুটো কথা বলে উত্তপ্ত হৃদয় ঠান্ডা করার সুযোগ থাকে না; সারা পৃথিবী কিংবা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড খুঁজলেও তার মুখটা একবার দেখা সম্ভব হয় না; জিনিসটা খুবই করুণ, এতোটাই করুণ যে পৃথিবীতে এক প্রকারের পাখি আছে যে পাখিটার সঙ্গী/ সঙ্গীনী মারা গেলে তার সাথে যোগাযোগ করতে না পরার দুঃখ সইতে না পেরে কয়েক মিনিট পরে সেই কষ্টে সেও মারা যায়। কারও সাথে মনোমালিন্য থাকলেও মৃত্যুর পরে তার সাথে দুটো ভালো কথা বলার ইচ্ছে তার শত্রুরও হয়, কিন্তু তার আর কোনো উপায় থাকে না। তার সাথে সকল যোগাযোগই চিরতরে বন্ধ। অথচ এই করুণ জিনিসটারই একটা অসম্ভব সুন্দর সৌন্দর্য্য আছে, আর এই সৌন্দর্য্যের রূপলাবণ্য আধুনিক সময়ে এসে আরও বেড়ে গেছে। মৃত্যুর চেয়ে সুন্দর জিনিস জগতে আর কিছু নেই। কারণ মৃত্যুর পরই শুধু তোমার না থাকার অভাব অন্যরা বুঝতে পারবে, তোমার গুণগুলোও হাইলাইট হবে। বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত শুধু দোষারোপ আর সমালোচনা ছাড়া আর কিছু পাবে না।

আধুনিক সময়ে এসে কে কার খবর রাখে। এই সময়ে স্বার্থ ছাড়া কেউ কারও জন্য এক বিন্দু পরিমাণ কোনো কিছুও করে না। সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরে মানুষ যে সহানুভূতিটুকু দেখায় সেইটুকু যদি কোনো মৃত ব্যক্তি দেখতে পেতো তাহলে সেই হৃদয় শীতল করা অনুভূতিটুকু নিয়ে সে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতো প্রভু আমার আর কোনো আপসোস নেই, তোমার স্বর্গও আমি চাই না, শুধু আমার মনের এই শান্তিটা স্থায়ী করে দাও, আর কোনো দুঃখ আমার অন্তরে আসতে দিওনা, শুধু এটুকুই চাই তোমার কাছে।

পশুপাখির মৃত্যুর আর একটা আলাদা রকমের সৌন্দর্য্য আছে। মারা যাওয়া পশুপাখিগুলোর মৃতদেহ দেখে একটা আলাদা রকমের মায়া লাগে। আরও বেশি মায়া লাগে যখন দেখা যায় কোনো মৃত প্রাণির চোখ আধো আধো মৃদু দৃষ্টিতে ম্লান হয়ে চেয়ে থাকে; নিস্প্রভ একটি দৃষ্টি। এই দৃষ্টিতে কোনো হিংস্রতা নেই, কোনো রাগ নেই, কোনো লোভ নেই, কোনো নেগেটিভ কিছুর ছোঁয়া নেই। একদম কোমল শান্ত নির্মল একটি চাহনি। প্রাণির চঞ্চলতা হারিয়ে শান্ত দেহ একটি অনন্য সৌন্দর্য্যের আভা ছড়ায়।

মানুষের মৃত্যুর সৌন্দর্য যদি পশুপাখির মৃত্যুর সৌন্দর্যের মতো হতো তাহলে অনেক সুন্দর হতো। কিন্তু মানুষের মৃত্যুর সৌন্দর্যটা খুবই করুণ অসহ্য একটা সৌন্দর্য। কারণ মানুষের মৃত্যুর আবার দুইটা ধাপ আছে, বিশেষ করে পুরুষ মানুষের। অধিকাংশ পুরুষই দুই ধাপে মারা যায়। প্রথম ধাপে মানসিকভাবে, পরের ধাপে দৈহিক তথা চূড়ান্ত মৃত্যু।
প্রথম ধাপের মৃত্যুটা হয় পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে পড়ে কারও স্বার্থবাদের শিকার হয়ে কিংবা কারও খেলার পুতুল হওয়ায় মাধ্যমে। এই পর্যায়ে মানুষের সত্তার মৃত্যু হয়।

মানুষের সত্তার মৃত্যুর কোনো পরিসংখ্যান হয় না, শুধু এই মৃত্যুর কিছু ধরণ আলোচনা করা যায়।
এই পৃথিবীতে এমনও কিছু মানুষ আছে যাদের মন জয় করার চেষ্টা করাটা বোকামি। তাদের মন জয় করা দূরে থাক, তাদেরকে নিজের কলিজা রান্না করে খাওয়ালেও তারা বলবে 'রান্নায় লবন কম হয়েছে'; তুমি যে তোমার কলিজাটা খাওয়ালে সেটা তার চোখে পড়বে না, লবণ কম হওয়াটা চোখে পড়বে। এরূপ মানুষকে মন দিয়ে তার অবহেলার পঁচনে অনেকের মনের মৃত্যু হয়।

অনেকের সত্তার মৃত্যু হয় স্বার্থবাদীতার আঘাতে বিশ্বাস ভঙ্গ হওয়া থেকে। এই মৃত্যুর করুণ রূপটা অন্যকারো চোখে পড়ে না। এই মৃত্যুতে মৃত সত্তাকে স্মরণ করে দেহ একটি গান গেয়ে থাকে "নিছক একটা অ্যাম্বুলেন্স হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আমার ভেতরে এক মুমূর্ষু রোগী"।
সত্তার এই মৃত্যুর শিকার অধিকাংশই শিক্ষিত ছেলেরা হয়ে থাকে। আর এটা ঘটে থাকে পড়াশুনা শেষে বেকারত্বের দুর্দিনে এসে। করোনা মহামারীতে যতো মানুষের দৈহিক মৃত্যু হয়েছে তা চেয়ে অনেকগুন বেশি মানুষের সত্তার মৃত্যু ঘটেছে চাকরি হারিয়ে বেকার হওয়ার ফলে।

ধান্দাবাজ ছেলেরা মেয়েদেরকে এবং ধান্দাবাজ মেয়েরা ছেলেদের নিয়ে খেলে থাকে একথা সবার জানা, কিন্তু পিতামাতাও যে তার সন্তানকে নিয়ে খেলে থাকে এই অপ্রিয় সত্যটা বোঝা যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বেকার জীবনে এসে।
ছোটোবেলা পিতামাতা যেসব ছেলেদের সাথে মিশতে দিতো না, এবং বলতো তুই ভুলেও অমুক অমুক ছেলেদের মতো হতে পারবি না, দিব্যি রইল। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করে পাবলিকে চান্স নিয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করতে ৯-১০ বছর লাইফটা ত্যানা ত্যানা হয়ে যায়, হাতে বেশি টাকাপয়সাও জমা থাকে না। ওদিকে সেইসব ছেলেরা যাদের সাথে মিশতে নিষেধ করতো তারা এই কয় বছরে ব্যবসা করে কয়েক লক্ষ টাকা জমায় আর নিজ টাকায় বিয়েশাদীও করে ফেলে। তখন পড়াশুনা শেষে বেকার জীবনে এসে আবার বাবা-মায়েরা ওই ছেলেগুলোর যাদের সাথে মিশতে পর্যন্ত নিষেধ করতো তাদের উদাহরণ টেনে বলে, "তুই কী করলি জীবনে, অমুক অমুক দেখ টাকা জমাইছে, এই করছে, সেই করেছে, তোর পিছে আরও কীসের টাকা খরচ করা, এতোদিন যেটা করেছি সেটাই লস্"। এদিকে আত্মীয়স্বজন আবার আসবে জ্ঞান দিতে। হেল্প করতে কেউ আসবে না,আসবে জ্ঞান দিতে। কী জ্ঞান? সেটা হলো ওমুকে সাত/ আট বছর চাকরি করার পর এখন ৬০/ ৭০ হাজার টাকা বেতন পায়; তুমিও ওইসব চাকরিতে যোগ দাও। কী চাকরি? কোম্পানির এস আর এর চাকরি, আরও সহজ করে বললে ভ্যানে করে মালামাল নিয়ে বিভিন্ন দোকানে দোকানে সাপ্লাই দিয়ে বেড়ানো, এর বেতন শুরুতে ৭-৯ হাজার টাকা, শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনোমতে ৩৩ নম্বর পেয়ে এসএসসি পাশ কিংবা কোনো কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পাশ। এখন কথা হলো তোমার ভালো পড়াশুনা করা এবং এই কয়েক বছরের তোমার প্রচেষ্টার কোনো মূল্যায়নই নেই। এই ধরণের একটা চাকরি যে আছে সেটা তুমি নিজেও ভালোকরেই জানো, কিন্তু তোমার এতো বছরের শ্রমের কোনো ভেল্যুই সেখানে নেই বলে সেই কষ্টে তুমি সেখানে যেতে পারো না। কিন্তু জ্ঞানদাতারা এই বিষয়টা এমনভাবে বলবে যে, তুমি এসব কিছু জানোই না, তারা তোমাকে এই তথ্যটা জানিয়ে দিয়ে তোমাকে অতি মহামূল্যবান একটা কিছু দিয়ে ফেলেছে। এই হলো বাস্তবতা। যখন তুমি তাদের এই জ্ঞানটা নিয়েও কাজে নামবে না, তখন তারা বলবে ভালো বুদ্ধি দিলাম আহাম্মক ছেলেটা শুনলো না। এবং তারা তোমার পিতামাতাকে এটাও বলবে যে, ঠিকই বলেছেন ভাই, আপনি আসলেই এতোদিন আপনার এই সন্তানের পিছে অহেতুক টাকা নষ্ট করেছেন। ওকে ভালো বুদ্ধি দিলাম, শুনতো না। যাহোক এতোদিন যা করেছেন তা তো আর ফেরৎ পাবেন না, আর নতুন করে টাকা খরচ করতে যাইয়েন না। ব্যস, আরও কী লাগে? এভাবে সাপোর্ট বন্ধ হয়ে যায় এবং স্বপ্নেরও মৃত্যু হয়।
ফলগাছে ফল না ধরলে সেই ফলগাছ যেমন কেটে ফেলা হয়, গাভীর দুধ না হলে সেই গাভী যেমন বিক্রি করে দেওয়া হয় তেমনি সন্তানের বেকারত্বের দুর্দিনে সন্তানকেও সেভাবে ছুঁড়ে ফেলা হয়।

এই হলো বাস্তবতা। পশুপাখির মৃত্যু হয় একভাবে এবং একবার, আর অধিকাংশ শিক্ষিত পুরুষের মৃত্যু হয় দুইভাবে এবং দুইবার। প্রথমে তার স্বপ্ন ও ভালোবাসা হারিয়ে তার নিজস্ব সত্তার মৃত্যু হয়, তারপর বাকি জীবন সে গাধার মতো একটা সত্তাহীন জীবনযাপন করে দৈহিকভাবে মৃত্যুবরণ করে।
বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছিলেন, ❝ অধিকাংশ মানুষই পঁচিশ বছর বয়সে মারা যায়, কিন্তু তাদেরকে সমাহিত করা হয় পঁচাত্তর বছর বয়সে ❞।

বেকারত্বের দুর্দিনে সবাই খারাপ ব্যবহার করে। মানুষ আঁড়চোখে তাকায়। আর এটা কোনো সাধারণ দুর্দিন নয়, এটা একটা মহাদুর্দিন। এই দুর্দিনে এসে এতো বেশি অবাক করার মতো সব ঘটনা ঘটে যেসব আগে কোনোদিন কল্পনাও করা যেতো না। এই সময়ে সেই বিখ্যাত বাগধারা 'অল্প শোকে কাতর, আর অধিক শোকে পাথর' এই ঘটনা জীবনে ঘটে থাকে। প্রথমদিকে অল্প আঘাতে কাতর হওয়া ছেলেটা পরে শান্ত হয়ে যায়, এর অর্থ এই নয় যে তার দুর্দিন কেটে গেছে; বরং সে অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছে।

এই সময়টাতে এসে পরিবার ও আত্মীয়রা ভয়াবহ রকমের স্বার্থবাদী আচরণ শুরু করে। দেখা যার যে একটা বেকার ছেলে কোনো একটা ছোট ব্যবসায় হাত দিয়েছে; সেটাতে কিছু টাকা ইনভেস্ট করলে ভালো লাভ হবে, কিন্তু ইনভেস্টের অভাবে প্রফিট খুবই কম। তখন পরিবার তাকে এরূপ কোনো সাহায্য করবে না যে এই নাও কিছু টাকা ইনভেস্ট করে ভালোমতো ব্যবসাটা করো, বরং বলবে 'তোর এই ব্যবসায় লাভ কই? এসব করে কাজ নাই তুই বাড়িতে কাজকাম কর'। কারণ বাড়িতে কাজ করলে পরিবারের লাভ। এখানে তাকে ছোট থেকে বড় হতে কেউ হেল্প করবে না বরং তার ক্ষুদ্রতা নিয়ে ভৎসনা ও সমালোচনা করে দাবিয়ে দেবে। জগতের সবখানেই স্বার্থের খেলা চলে, শুধু খেলার কলাকৌশলটা পরিবার, সমাজ, অফিস, ধর্মাধিষ্ঠান ও বিভিন্ন জায়গাভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।

এই সময়ে এসে নিজের মাও অন্যের প্ররোচনায় পড়ে সৎ মা এ রূপান্তরিত হয়। মা বেঁচে না থাকলেও তার কবরের পাশে বসে থেকে একটা আপনত্বের শান্তি অনুভব করা যায়, কিন্তু বেকারত্বের দুর্দিনে যখন অন্য কারো প্ররোচনায় নিজের মা সৎ মা এ রূপান্তরিত হয় তখন যে কষ্টটা হয় সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মা বেঁচে না থাকলেও তার কবর থাকে কিন্তু এরূপ একটা থেকেও না থাকা মাতৃহীনতার শূন্যতার হাহাকার অন্তরটাকে ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে খায়। এই পরিস্থিতিতে যারা পড়েননি তারা এটা বুঝতে পারবেন না।

আমি যখন ইন্টারমিডিয়েটে রংপুরে থাকতাম তখন একটা স্বপ্নয়ম শান্তিতে ভরে থাকতো মনটা। তখন যে হাতে অনেক টাকা ছিল এমনটি নয়, তবে মনে নানাবিধ সুখানুভূতি ও শান্তি ছিল। কিন্তু এই স্বপ্নহীন, সহযোগিতাহীন একটা সময় এটাতে কোনো ভালো জিনিসও ভালো লাগে না। আমার পরিচিত দু'একজন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে এবং আমিও ছেড়ে দিবো। কারণ এই পরিস্থিতিতে এসব ভালো লাগে না, বরং বেশি তেতো ও বিস্বাদ লাগে। ভোর সকালে যার বাবা মারা গেছে তার কাছে বহুদিনের প্রতিক্ষিত সাধের কাচ্চি বিরানি/ কোরমা পোলাও কিংবা চাইনিজ/ থাই ফুড দিয়ে সাজানো ব্রেকফাস্ট ভালো লাগবে না, বরং বিস্বাদ লাগবে, কিন্তু অন্যরা এটা বুঝবে না, যার বাবা মারা গেছে সেই শুধু বুঝবে। বাহিরে বের হলেই জ্ঞান দেওয়া লোকের অভাব হয় না কিন্তু হাতে ধরে এগিয়ে যেতে শিখিয়ে দেওয়ার লোক একজনও পাওয়া যায় না। বেকারত্বের সময়ে এসব লোকের ফাও জ্ঞান অসহ্য লাগে বলে সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করতে হয়।

আগে কয়েক বন্ধুতে মিলে ঝালমুড়ি কিনে খেয়ে যে শান্তি পেতাম এখন কোথাও এক প্যাকেট বিরানি খেয়েও সেই শান্তি পাই না, না জানি এই বিরানি খাওয়ানোর পিছনে কোন স্বার্থ লুকিয়ে আছে।

Monday, March 22, 2021

মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়!


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার লেখনিতে বলেছিলেন 'মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়'; আসলেই মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়, আর এক্ষেত্রে তিনি স্বার্থ বলতে হীনস্বার্থকে বুঝিয়েছিলেন। এখন আমি এই বিষয়টিকে একটু জুম করে বলতে চাই। মানুষের রুচিবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি যখন স্বার্থের লেভেল ক্রস করে হীনস্বার্থের দিকে পড়ে তখন সে অন্ধ হয়ে যায়। কারণ মানুষ যখন কোনো সুস্বাদু জিনিসের স্বাদ পেয়ে যায় তখন সে ভোগের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। খেয়াল করে দেখবেন যে, বাংলাদেশে যেসব ভণ্ড পীরের আস্তানা রয়েছে সেখানে অন্ধ মুরিদেরা পীরকে সেজদাহ্ করে। এটি ইসলামে নিষিদ্ধ এবং এটি যে নিষিদ্ধ সেটা হয়তো সেই অন্ধ ভক্তরা না জানলেও তথাকথিত পীরেরা কিন্তু একথা ঠিকই জানেন। জানার পরেও তারা এটিকে বন্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না, কারণ তারা বিকৃত মস্তিষ্কের সম্মান লাভের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছেন যেখানে মুরিদেরা তাদের এতোটাই ভক্তি করেন যেরূপ ভক্তি অন্য ধর্মাবলম্বীরা দেবতাদেরকে করে থাকে সেরূপ ভক্তি করেন; আর এরূপ ভক্তি পেয়ে পেয়ে তাদের নেশা হয়ে গেছে। এই সুস্বাদু জিনিস ভোগ করার নেশায় তারা এমনভাবে মত্ত হয়ে গেছে যে, 'সার্ভিস হোল্ডার' নাটকের অভিনয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেছিলেন, "অফিসে 'স্যার' ডাক শুনতে শুনতে আমার এমন অভ্যাস হয়ে গেছে, এখন কেউ 'ভাই' বলে ডাকলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়" সেরকম অবস্থা।
তারা জানে এটি নিষিদ্ধ এবং এই কাজ করতে দিলে যে তাদেরকে নরকে যেতে হবে এটাও তারা জানে; জানার পরেও তারা এটা থেকে সরে আসছে না কারণ এই সুস্বাদু জিনিসের তাৎক্ষণিক ভোগের নেশা তাদেরকে অন্ধ বানিয়ে দিয়েছে। এই নেশা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারছেন না।
এটা তো গেলো ধর্মব্যবসায়ীদের লেভেল। বঙ্গবন্ধু বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন তার জেল জীবনের কথায় সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যখ্যা দিয়ে। অধিকারের আন্দোলন করায় রাজনৈতিক হীনস্বার্থের বলি হয়ে বঙ্গবন্ধুকে বহুদিন কারাভোগ করতে হয়েছিল। বহুদিন না দেখায় ফলে এবং চেহারা অত্যাধিক ভেঙে পড়ায় তখন তার শিশুসন্তান তাকে চিনতে পারছিলো না। কারামুক্তির পর বাড়ি ফিরলে তার সন্তান শেখ কামাল শেখ হাসিনাকে বলেছিল, "হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি"। এদেশের স্বার্থের আন্দোলন করায় হীনস্বর্থের বলি হয়ে তাকে এই ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল।
দেশের বিষয়, ধর্মের বিষয় ছাড়াও সমাজ, পরিবার, ব্যক্তি সব লেভেলেই এটি সত্য যে মানুষ হীনস্বার্থবাদীতার চর্চা করতে গিয়ে অন্ধ হয়ে যায়। এই অন্ধত্ব থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ বেরিয়ে আসতে পারবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে হীনস্বার্থ ভোগ করা থেকে নিজেকে মুক্ত করে পরিশুদ্ধ হতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মানুষ নামের দাবীদার নয়। কিন্তু তারাও দেখতে মানুষের মতো বলেই এবং অভিধানে তাদের আলাদা কোনো নাম না থাকায় বলা হয় 'মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়'; আসলে মানুষ হীনস্বার্থের প্রতি আকৃষ্ট হলে অন্ধ ও অমানুষ হয়ে যায়।
পারিবারিক জীবনে অংশীদারীত্বের সম্পর্কযুক্ত মানুষগুলো কীভাবে হীনস্বার্থের জন্য অন্ধ ও অমানুষ হয়ে যায় এবং নিজের আপনজনকে পথে বসাতেও দ্বিধা করে না তা আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনাতে উল্লেখ করেছি। আমার আত্মীয়রা তাদের হীনস্বার্থের জন্য কীভাবে আমাকে পথে বসিয়েছে তা জানতে পারলেই তোমরা অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের লাইফ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন ও সতর্ক হতে পারবে।

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



লাইফের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ-পরামর্শ পেতে লাইফ একাডেমির অ্যাডভইস ডেক্সে আসুন। আর Advice Desk এর ওয়েবসাইটের হোমপেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন

সুন্দর জীবনের জন্য পরামর্শ | Advice Desk

Monday, March 15, 2021

সবাই সফলতার কৃতিত্বের অংশীদার হতে চায় কিন্তু কেহই ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করতে চায় না!


পরিবার থেকে শুরু করে সর্বত্র সবক্ষেত্রেই একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, মানুষ সবাই সফলতার কৃতিত্ব নিতে চায় কিন্তু কেহই ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করতে চায় না। যেমন বর্তমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তথা স্কুল-কলেজগুলোতে বেশিরভাগ স্কুল-কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষকই প্রাইভেট পড়ানো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং দেখা যায় যে প্রাইভেট পড়ানো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ শিক্ষকই যেসব শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট পড়ান তাদেরকে প্রাইভেটে খুব সুন্দর করে পড়াশুনার বিষয়বস্তুগুলো শিখিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই একই শিক্ষক স্কুলের ক্লাসে শিক্ষার্থীদেরকে মোটেও ততটা সুন্দরভাবে সেই জিনিসগুলো শেখান না। এজন্য বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাইভেট পড়া জিনিসটা আবশ্যিক হয়ে গেছে; কারণ ওই যে ক্লাসে ভালো না পড়ানোর সেই ঘাটতির জায়গাটা প্রাইভেট পড়েই পূরণ করতে হয়। এখন দেখবেন যে, প্রতিষ্ঠানের অবদানে পরীক্ষায় ভালো করেছে এমন দৃষ্টান্ত খুবই কম; শহরে এবং বিত্তশালী পরিবারে থাকে টিউশনির শিক্ষক আর গ্রামে ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য থাকে প্রাইভেট ব্যাচ। স্কুল-কলেজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষায় ভালো ফলাফল হয় না। কিন্তু দেখবেন যে, যেসব শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়ে পরীক্ষায় ভালো করেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা এটাকে নিজেদের কৃতিত্ব হিসেবে গ্রহণ করে থাকে; কিন্তু যে শিক্ষার্থীগুলো শুধু স্কুল-কলেজের ক্লাসের পড়াশুনার উপর নির্ভরশীল ছিল এবং প্রাইভেট পড়তে পারেনি বলে পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি তাদের সেই ব্যর্থতার দায়ভারের ভাগ কিন্তু কোনো শিক্ষকই নিতে চায় না; অথচ তাদেরকে পড়ানোর দায়িত্বটা ছিল তাদেরই উপরে, প্রাইভেট পড়া তো একস্ট্রা বিষয়। স্কুলে তাদের শেখানোর দ্বারা যদি স্কুলের ফলাফল ভালো হয় সেই কৃতিত্বের দাবীদার শিক্ষকরা হতে পারেন; প্রাইভেট পড়ে ভালো করা শিক্ষার্থীদের সফলতার কৃতিত্বের দাবীদার তারা নন। অথচ প্রাইভেট পড়ে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের সফলতার কৃতিত্ব তারা নিতে আগ্রহী কিন্তু যেটা তাদের রিয়েল রেজাল্ট অর্থাৎ প্রাইভেট না পড়া ছেলেমেয়েগুলোর মন্দ রেজাল্ট আর এর পেছনে যে তাদেরও আংশিক দায়ভার আছে সেটা তারা স্বীকার করতে চান না, এটাকে তারা পুরোটাই সেসব শিক্ষার্থীদের নিজেদের ব্যর্থতা ও অক্ষমতা হিসেবে দেখেন।
ছাত্র ভালো করলে শিক্ষক কৃতিত্ব নেন, কিন্তু ছাত্র খারাপ করলে শিক্ষক তার দায়ভারের ভাগ নিতে চান না।
পরিবারেও একই ঘটনা ঘটে থাকে। পরিবারের কেউ সফলতা লাভ করলে তার কৃতিত্ব পরিবারের সবাই নিয়ে থাকে, এবং এটা নেওয়াটা তাদের অধিকার; কারণ একজন মানুষের সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান থাকে তার পরিবারের। আবার তেমনিভাবে কারও কোনো কাজে ব্যর্থতার পেছনেও পারিবারিক অবস্থারও প্রভাব থাকে আর এক্ষেত্রে সেই ব্যর্থতার দায়ভারের ভাগ পরিবারের কেউ নিতে চায় না, এটাকে পুরোপুরি তার নিজের ব্যর্থতা ও নিজের অক্ষমতা হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। কেউ যদি সফল হয় তাকে নিয়ে সবাই গর্ব করে ও সেই সফলতার পেছনে নিজের কী কী অবদান আছে তা বলে থাকে, কিন্তু কোনো পরিবারে কেউ খারাপ করলে তার ব্যর্থতার পেছনে নিজেদের কোন কোন সীমাবদ্ধতা, অসহযোগিতা ও অবহেলা ছিল তা স্বীকার করে ব্যর্থতার দায়ভারের ভাগ নিতে চায় না।
কেউ যদি লাইফে সফলতা ও ব্যর্থতা এই দুটোরই স্বাদ পেয়ে থাকেন তাহলে সে এই বিষয়টা ভালো করে দেখেছে; একই মানুষগুলো একই মুখে দুই রকমের কথা বলে, সফল হলে একরকম আর ব্যর্থ হলে আরেক রকম।
আমার পারসোনাল লাইফেও আমি এই জিনিসটা খুব বেশি ফেস করেছি। আমার শর্ট টাইম মেমোরি লস সমস্যার কারণে আমি গত কয়েক বছর ধরে কোনো পরীক্ষায় ভালো করতে পারছি না। আমার এই ব্রেইনের সমস্যার সুত্রপাত পারিবারিক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণেই। আর এই সমস্যা ওভারকাম করার জন্য আমার একটা যে ধরণের অনুকূল পরিবেশ দরকার সেরূপ পরিবেশ পাওয়ার মতো উপায়ও নেই। আমার এই সমস্যা সৃষ্টির দায়ভার পরিবার নেবে না, এমনকি এ থেকে ওভারকামেও আমাকে হেল্প করবে না।
এই পৃথিবীর সবাই সফলতার কৃতিত্বের অংশীদার হতে চায় কিন্তু কেহই ব্যর্থতার দায়ভারের ভাগ নিতে চায় না।
তাই কামিনী রায়ের সেই মহান কবিতার কথা ভুলে যাও। আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন; আজকের দিনে যার জন্য নিজের স্বার্থ ত্যাগ করবে সেই উল্টো আঘাত করবে। নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে হতেম তাই হলে তাদের লাথি-গুতো খেতে হবে। আর, একবার অধিকার সচেতন হয়ে জীবনে সফল হয়ে দেখুন অন্যরা কতটা সমীহ করে এবং ভালোবাসে। এযুগে স্বার্থ ত্যাগ করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না, বরং উল্টো অবহেলা ও তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়।

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



আপনি কি স্মার্ট ইংরেজি শিখতে চান?
কিংবা,
ইংরেজিতে স্মার্ট রেজাল্ট করতে চান?

তাহলে,
দেখুন আমাদের প্যাকেজসমূহ:

[] Academic Package (JSC, SSC & HSC)
[] Standard Package (Speaking, Writing & Translating)
[] Competitive Package (For "Competitive English")

আমাদের এ প্রজেক্টের টপিকসমূহের নোট দেখতে এখানে—ক্লিক—করুন

English Grammar Learning System (EGLS)

"100% Updated English Learning System for Professional English"

Learn English Easily |
LIFE English Learning Program

Sunday, March 14, 2021

ভদ্র ছেলেদের জীবন অনেক কষ্টের হয়!


ভদ্র ছেলেরা লাইফের শুরুতে অনেক প্রশংসা পায়। তাই তারা ধরেই নেয় যে এই প্রশংসা পাওয়ার মতোই মনে হয় তারা তাদের লাইফের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সাপোর্টও পাবে। কিন্তু লাইফের একটা নির্দিষ্ট বয়সে গিয়ে তাদের এই ভুল বিশ্বাস ভেঙে যায় এবং তারা বুঝতে পারে যে, জীবনে ভদ্র ছেলে হয়ে শুধু প্রশংসাই পাওয়া যায়, কোনো সাপোর্ট পাওয়া যায় না; অধিকন্তু যখন ভদ্র ছেলেরা অন্যের কাছে প্রশংসা পেয়ে মানুষকে বিশ্বাস করে থাকে এই সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে আশেপাশের লোকজন তাদেরকে ঠকিয়ে থাকে এবং তারা ভদ্র ছেলে হওয়ায় একটি কাল্পনিক ভুল বিশ্বাসের কারণে তারা এই ঠকানোর প্রতিবাদ করে না; আর এটাই হয় তাদের আত্নশক্তি ও নিজস্ব সত্তার ভাঙনের শুরু। যেহেতু তারা লাইফের শুরুতে প্রশংসা পেয়েছে তাই তারা ভেবেই বসে যে আমাকে অল্প একটু ঠকালেও সকলে আমার পাশে আছে আর আমি এক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে চুপ থাকলে আমাকে আরও বেশি ভালোবাসবে এবং দুর্দিনে আমার পাশে থাকবে। কিন্তু লাইফের ক্লান্তিকালে এসে তারা বুঝতে পারে যে, ভালো-ভদ্র ছেলে হয়ে লাইফে প্রশংসাই শুধু পাওয়া যায় সাপোর্ট জিনিসটা পাওয়া যায় না অর্থাৎ অধিকার আদায় করে নিতে হয়, অধিকার কেউ কাউকে দেয় না। তাই এই ভুল বিশ্বাস থেকে যখন কোনো ভদ্র থেকে যথাসময়ে বেরিয়ে আসতে পারবে তখন থেকেই সে তার লাইফের আত্মপ্রতিষ্ঠার বীজ বপন করে ফেলবে এবং লাইফে সফল হতে সক্ষম হবে।
আর যারা এটা বুঝেও সাহসের অভাবে কিছু করতে পারবে না তারা জেনে রাখো যে ভদ্র ছেলেদের জীবন অনেক কষ্টময়, অবহেলাপূর্ণ, দুর্গতিময় ও বিড়ম্বনায়ময় হয়; কারণ সবাই তাদের নিয়ে খেলে থাকে; তাদেরকে ভালো কেউ বাসে না। 
আসলে এই 'ভালোবাসা' শব্দটাই হচ্ছে একটা ধোঁকা এবং জীবনের গতি থামিয়ে দেওয়ার একটি ভ্রান্ত ধারণা। জগতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই। এই জগতের প্রতিটি মানুষ তিনটি জিনিসের চর্চা করে তা হলো— স্বার্থবাদ, সুবিধাবাদ এবং কর্তৃত্ববাদ। এই জিনিসটা ভদ্র ছেলেরা অনেক দেরিতে বুঝতে পারে। ততদিনে তাদের লাইফ থেকে মূল্যবান অনেক কিছু হারিয়ে যায়।
এভাবে ভদ্র ছেলেদের জীবনটা অনেক রূঢ়, শুষ্ক ও ধুসর-বিবর্ণ হয়ে থাকে। হুমায়ূন আহমেদের একটা উক্তি আছে— "ভদ্র ছেলেদের জন্য মেয়েদের অন্তরে কখনও ভালোবাসা জন্মায় না, যেটা জন্মে সেটা হলো সহানুভূতি"; মেয়েদের অন্তরে তো তাও সহানুভূতি জন্মে, অন্যান্য মানুষদের অন্তরে সেটাও জন্মে না।

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



গিভ অ্যান্ড টেক | A book of self development

মুখবন্ধ
•••••••••
মাতৃস্নেহ অতুলনীয়, বাবার মতো বন্ধু কেউ নেই, পরিবার সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা হেন তেন— এইসব কথাবার্তা হলো ভুয়া এবং অতিরঞ্জিত কথাবার্তা। এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, সবাই স্বার্থবাদী এবং সুবিধাবাদী— এই সত্যটা যে যত দ্রুত বুঝতে পারবে তার জন্য ততই মঙ্গল। এই পৃথিবীর সবাই চলে 'গিফ অ্যান্ড টেক' পলিসিতে; সবাই তোমার কাছে কিছু জিনিস প্রত্যাশা করে, আর সেই প্রত্যাশা নিয়েই তোমার উপর ইনভেস্ট করে। তুমি যদি সময়মতো সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারো তাহলেই বুঝবে তোমার প্রতি ইনভেস্ট করাটা ভালোবাসার দান ছিল নাকি প্রত্যাশার ইনভেস্ট ছিল। তুমি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে তোমাকে দোষারোপ করা হবে; তুমি কী কারণে পারো নাই তা কেউ বুঝতে চাইবে না; ভুল বোঝার জন্য অনেকে থাকে, কিন্তু পরিস্থিতি বোঝার জন্য কেউ থাকে না। নিজের একান্ত দুর্দিনে কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না। বাবা-মা, অমুক মামা, অমুক খালু, অমুক আঙ্কেল, অমুক ভাই-তমুক ভাই, অমুক বন্ধু-তমুক বন্ধু কাউকেই তখন পাশে পাওয়া যায় না।
প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই একটা সংকটময় সময় থাকে। তোমার জীবনে  সেই দুঃসময়টা যেদিন আসবে সেদিন থেকে তুমি পরিপূর্ণ ও সক্ষম মানুষ হতে শিখবে, সেদিন তুমি বুঝবে যে তুমি আসলে কে? অমুকের ছেলে বা মেয়ে, অমুকের ভাতিজা, অমুকের ভাই, অমুকের বন্ধু, ব্লা ব্লা— এসব কোনোটাই কাজে আসে না। তুমি আসলেই একা এবং তোমার নিজের পথ তোমাকে একাই গড়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের জ্ঞানবুদ্ধি, সাহস ও কর্মসক্ষমতাই একমাত্র সহায়ক হিসেবে কাজে আসে।
দেখা যায় ভদ্র ছেলেদের লাইফ অনেক কষ্টের হয়, কারণ তারা এই সত্যটা অনেক দেরিতে বুঝতে পারে। শৈশবে দুষ্টু থাকা ছেলেগুলো অল্প বয়সে ভুল করে ও এর দ্বারা বুঝে যায় তার কাছের মানুষগুলো আসলেই তার কতটা কাছের এবং সেই মাফিক লাইফ সাজিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ভদ্র ছেলেগুলো এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে শেখে অনেক দেরিতে।
এন্টিবায়োটিকের ডোজ কম্পিলিট না করলে দুর্বল হয়ে থেকে বেঁচে যাওয়া ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া যেমন পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের গঠন চেঞ্জ করে ফেলে নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলে, এই বইটি পড়লে সেইসব পরিস্থিতিতে থাকা তরুণরা যারা এখনও জানে না ভবিষ্যতে তাদের সাথে কী ঘটতে চলেছে সেইসব ছেলেমেয়েরাও নিজেদের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে শিখবে ও নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য সেইভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
তাই এরূপ বিভিন্ন কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তানদের লাইফের বিভিন্ন পরিস্থিতি গবেষণা করে তা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য পন্থা ও পদ্ধতি নিয়ে এই বইটি লেখা হয়েছে। বইটি সে সকল ছেলেমেয়েদের উপকারে এলে আমাদের এই পরিশ্রম ও প্রয়াস সার্থক হবে।

বইটি প্রি-অর্ডার করতে বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'টাইম পাবলিকেশন্স' এর ফেসবুক পেজের মেসেজ ইনবক্সে মেসেজ করুন। সম্পূর্ণ বই লেখা হলেই আমরা আপনাকে রিপ্লাই দিবো।
টাইম পাবলিকেশন্স এর ফেসবুক পেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন

টাইম পাবলিকেশন্স | A Publication of Life Academy

Saturday, March 13, 2021

পারিপার্শ্বিক অবস্থা যেভাবে আমাকে বদলে দিলো!


আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে বললেন আমি নাকি খুব উগ্র হয়ে গেছি। হ্যা, কথাটা সত্য; এটা স্বীকার করতে আমার সমস্যা নাই। তবে আমি যে একসময় খুবই শান্ত ও ভদ্র ছিলাম যেরকম শান্ত-ভদ্র ছেলে হাজারে একজন পাওয়া যায় সেইরকম একজন ছেলে ছিলাম একথা তিনি বিশ্বাস করলেন না।
তাহলে তো আমাকে বলতেই হয় কীভাবে আমি এতো শক্ত, উগ্র ও ইস্পাত কঠিন হয়ে গেলাম তার কিছু সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত। আর সেসব বলার আগে আমার শৈশব ও কৈশোরের নরম মন-মানসিকতার কিছু নমুনা তুলে ধরি। একবার কোনো একদিন বাবা আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে হাটে গেলেন। মাছের বাজারে নদীর কিছু দেশী মাছ বিক্রি হওয়া প্রায় শেষ, স্টকের শেষ মাছটুকু বাবা কিনলেন, অন্য একজন কিনতে এসে আর পেলেন না। আমার ইচ্ছে হলো মাছগুলো তাকে দিয়ে দেওয়া হোক, যেহেতু সে নিতে আশা করেছে। অথচ আমরা আগে নিয়েছি এবং এটাই আমাদের অধিকার— এই সত্য-সঙ্গত অধিকারের দম্ভ টুকুও আমার ছিল না; এতো নরম-কোমল মন নিয়ে ছিলাম।
কখনও যদি মানুষের আঘাতে পা ভেঙে যাওয়া কোনো কুকুর চোখে পড়তো সেই অবোলা প্রাণিটার কষ্টে দুঃখ পেয়ে কয়েকঘণ্টা মনমরা ও ব্যথিত হয়ে থাকতাম। কোনো পশুপাখি মরে পড়ে আছে কিংবা কোনো পাখি বৃষ্টিতে ভিজে কাঁপছে কিংবা আঘাত পেয়েছে দেখলে কী কষ্টটাই না পেতাম। কোনো পঙ্গু মানুষকে দেখলে তার কষ্টের দুঃখ কয়েকদিন ধরে আমাকে তাড়া করে বেড়াতো।
এককথায় মানুষ বা কোনো প্রাণির কোনো কষ্ট দেখলে খুব ব্যথিত হয়ে যেতাম।
এসব তো গেলো আমার কোমল মনের বিষয়বস্তুর কথা; এখন বলতে হয় আমার শৈশবের ভীরুতা সম্পর্কে। আমি যে কতটা ভিতুর ডিম এবং বোকা ও আত্নবোধহীন ছিলাম তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। কেউ অন্যায়ভাবে আমাকে কিছু বললে বা কিছু করলে আমি তা মেনে নিতাম এবং সেটা যে অন্যায় করা হচ্ছে এবং এর যে প্রতিবাদ করা যায় তাও আমি বুঝতাম না।
সেইসাথে আমি শৈশবে আমার সমবয়সীদের অকাজের শাস্তির ভাগীদার হতাম। তাদের সাথে যখন ঘুরতে যেতাম তারা এটা সেটা অকাজ করতো; আমি তাদের সেসব থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতাম এবং তখন নিজে সৎ থাকতে আমি সেই কাজে অংশ না নিয়ে সেখান থেকে চলে আসতাম। অথচ উল্টো যখন সেই ক্ষতি যে ব্যক্তির হয়েছে সে যখন তাদের কাউকে ধরে বসতো তখন তারা আমার নামে দোষ চাপিয়ে বলতো যে আমি ওই কাজটা শুরু করেছি। এভাবে অন্যদের মন্দ কাজের দোষের ভাগী হতে হতো কোনো দোষ না করেই। আর আমার পরিবারের অভিভাবক আবার ওদের কথাই বিশ্বাস করে মহান বিচারক সেজে আমার শাস্তির ব্যবস্থা করতো। সাহস দেখিয়ে যে ওদের এই হীন কাজের শিক্ষা এদের দিবো সেই সাহস ও বুদ্ধিও পেতাম না। এভাবে তিক্ত অভিজ্ঞতা হতে থাকায় আমি অন্যান্য সমবয়সী কিশোরদের সাথে ঘোরাফেরা বন্ধ করে দেই। ফলে আমি সামাজিকীকরণে পিছিয়ে পড়ি এবং প্রবল অন্তর্মুখী হয়ে যাই।
আমি সবসময় সত্য কথা বলতাম এবং এখনও বলি। আমি সত্যবাদী ছিলাম কিন্তু সৎসাহসী ছিলাম না। যে কাজটা আমি করি নাই তবুও যদি একবারের বেশি বারবার কয়েকবার জিজ্ঞেস করতো যে আমি সেটা করেছি কি না? তখন এই বারবার করা একই প্রশ্ন সহ্য করতে না পেরে সেই কাজ না করেও স্বীকার করতাম যে আমি সেটা করেছি। কিন্তু এখন আর তা করি না। সত্য কথা একবার বলার পর আবার কেউ একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে এতো বেশি রেগে যাই যে পুনরায় এক কথা তোলার সাহস কেউ করে না।
আমার কঠিন হওয়ার শুরু সরলতার বিশ্বাস ভঙ্গ হওয়া থেকে। আমি খুবই সরল মনের মানুষ ছিলাম। কেউ কিছু বুঝালে সুবোধ বালকের মতো তা বুঝতাম। কিন্তু লাইফে বহুবার যখন দেখলাম যে সেসব কোনো ভালো বুঝ ছিল না, ছিল শুধু স্বার্থবাদীতার প্রয়োগ তখন থেকে সেসব লোককে শ্রদ্ধা সমীহ করা বন্ধ করতে শুরু করলাম।
এরপর আমার লাইফের চাওয়াপাওয়া ও প্রত্যাশাগুলোকে একে একে ধামাচাপা পড়তে দেখলাম। মানুষজাতি ও মানব সমাজের অনেক কপটতা, কুটিলতা ও বহুরূপতা দেখলাম। ছোটোবেলার জেনে আসা অনেক নীতিকথা ভুল প্রমাণিত হতে দেখলাম। উপরের সৌন্দর্য ও মধু'র ভিতরে কুৎসিত রূপ ও বিষ লুকিয়ে থাকা দেখলাম। দেখলাম প্রতিটি মানুষই লাইফে অন্যের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করে কিন্তু নিজেকে অন্যের ক্ষেত্রে সেরূপ ডেডিকেটেড করে না বরং নিজে স্বার্থবাদ, সুবিধাবাদ এবং কতৃত্ত্ববাদ এই তিনটা জিনিসের চর্চা করে।
লাইফে অন্যের সহযোগিতা পাওয়ার পরিবর্তে পেলাম কুলুপবাজি, সমালোচনা এবং সান্ত্বনা।
সেইসাথে কোমল মনের চর্চা সাহিত্য পড়া বাদ দিয়ে কঠিন বাস্তবতার বিষয়বস্তু পড়া শুরু করলাম। তাই এখন আমি আর অন্যদের ভুংভাং কথা সুবোধ বালকের মতো মেনে নেই না বলে অভদ্র, উগ্র সাব্যস্ত হয়ে মানুষের সমালোচনার উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হলাম। অবশ্য এতে আমি ঘাবড়াই না।
এপিজে আবদুল কালাম বলেছিলেন, "সামনে দাঁড়িয়ে পথ দেখানোর কেউ নেই, পাশে দাঁড়িয়ে ভরসা দেওয়ার কেউ নেই, কিন্তু পেছনে দাঁড়িয়ে সমালোচনা করার লোকের অভাব নেই"।
ডেল কার্নেগী বলেছিলেন, "বাহিরে থেকে কারও সমালোচনা করা যতটা সহজ তার জায়গায় দাঁড়িয়ে তার পরিস্থিতি বোঝা ততটাই কঠিন"।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, "নিন্দা করতে গেলে বাইরে থেকে করা যায়, কিন্তু বিচার করতে গেলে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়"।
আমি জানি বিচার করার মতো মানসিকতা অন্য জাতির থাকলেও বাঙালি জাতির নেই। সমালোচনা হলো বাঙালির একটি প্রিয় মুখরোচক খাবার।
বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে সমালোচনা করার একটি নীতি আছে তা হলো একটা বিষয়ে ভালোভাবে জেনে তারপর তারা সমালোচনা করে, কিন্তু বাংলাদেশে এর উল্টো; এখানে সেই কয়েক অন্ধের হাতি দেখা গল্পের মতো বাঙালি কোনোকিছুর ১০% জেনেই তাতে কমেন্ট করে। সেসব দেশসমূহে সমালোচনা করতে যোগত্যা লাগে আর বাংলাদেশে কারো সমালোচনা করতে গেলে নিজের মুর্খতাই যথেষ্ট।
সেই শৈশবের বিনা অপরাধে দোষের ভাগী হওয়ার কথাগুলো আমার এখন কখনও কখনও মনে পড়লেও সেগুলো কোনো দুঃখ উৎপাদন করে না। কিন্তু তরুণ বয়সের কিছু নিরপরাধ দুর্ভোগ আমাকে বেশ কঠিন মানুষ বানিয়ে দিলো। সেসব আমি আমার অন্য একটা লেখায় লিখেছি। ইচ্ছে হয় অপরাধ না করেও যখন গত ১০ বছরে অনেকের করে যাওয়া অপরাধের শাস্তির ভাগ ভোগ করলাম তাহলে এখন সেই অগ্রিম শাস্তি গুলোর অপরাধ করে সেটা পুষিয়ে দেই।
হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, "মানুষ শুধু শুধুই কঠিন হয় না, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও বর্তমানের পরিস্থিতি তাকে কঠিন হতে বাধ্য করে"।
আমি আমার লাইফে প্রথমে আমার স্বপ্নগুলোকে হারালাম, তারপর আমি আমার ভালোবাসাকে হারালাম এবং সর্বশেষ আমি একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার মতো পরিবেশটাও হারালাম। তো আমি উগ্র হবো না তো কী হবো?

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



গিভ অ্যান্ড টেক | A book of self development

মুখবন্ধ
•••••••••
মাতৃস্নেহ অতুলনীয়, বাবার মতো বন্ধু কেউ নেই, পরিবার সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা হেন তেন— এইসব কথাবার্তা হলো ভুয়া এবং অতিরঞ্জিত কথাবার্তা। এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয়, সবাই স্বার্থবাদী এবং সুবিধাবাদী— এই সত্যটা যে যত দ্রুত বুঝতে পারবে তার জন্য ততই মঙ্গল। এই পৃথিবীর সবাই চলে 'গিফ অ্যান্ড টেক' পলিসিতে; সবাই তোমার কাছে কিছু জিনিস প্রত্যাশা করে, আর সেই প্রত্যাশা নিয়েই তোমার উপর ইনভেস্ট করে। তুমি যদি সময়মতো সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারো তাহলেই বুঝবে তোমার প্রতি ইনভেস্ট করাটা ভালোবাসার দান ছিল নাকি প্রত্যাশার ইনভেস্ট ছিল। তুমি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে তোমাকে দোষারোপ করা হবে; তুমি কী কারণে পারো নাই তা কেউ বুঝতে চাইবে না; ভুল বোঝার জন্য অনেকে থাকে, কিন্তু পরিস্থিতি বোঝার জন্য কেউ থাকে না। নিজের একান্ত দুর্দিনে কাউকেই পাশে পাওয়া যায় না। বাবা-মা, অমুক মামা, অমুক খালু, অমুক আঙ্কেল, অমুক ভাই-তমুক ভাই, অমুক বন্ধু-তমুক বন্ধু কাউকেই তখন পাশে পাওয়া যায় না।
প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই একটা সংকটময় সময় থাকে। তোমার জীবনে  সেই দুঃসময়টা যেদিন আসবে সেদিন থেকে তুমি পরিপূর্ণ ও সক্ষম মানুষ হতে শিখবে, সেদিন তুমি বুঝবে যে তুমি আসলে কে? অমুকের ছেলে বা মেয়ে, অমুকের ভাতিজা, অমুকের ভাই, অমুকের বন্ধু, ব্লা ব্লা— এসব কোনোটাই কাজে আসে না। তুমি আসলেই একা এবং তোমার নিজের পথ তোমাকে একাই গড়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের জ্ঞানবুদ্ধি, সাহস ও কর্মসক্ষমতাই একমাত্র সহায়ক হিসেবে কাজে আসে।
দেখা যায় ভদ্র ছেলেদের লাইফ অনেক কষ্টের হয়, কারণ তারা এই সত্যটা অনেক দেরিতে বুঝতে পারে। শৈশবে দুষ্টু থাকা ছেলেগুলো অল্প বয়সে ভুল করে ও এর দ্বারা বুঝে যায় তার কাছের মানুষগুলো আসলেই তার কতটা কাছের এবং সেই মাফিক লাইফ সাজিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ভদ্র ছেলেগুলো এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে শেখে অনেক দেরিতে।
এন্টিবায়োটিকের ডোজ কম্পিলিট না করলে দুর্বল হয়ে থেকে বেঁচে যাওয়া ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া যেমন পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের গঠন চেঞ্জ করে ফেলে নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার উপযোগী করে গড়ে তোলে, এই বইটি পড়লে সেইসব পরিস্থিতিতে থাকা তরুণরা যারা এখনও জানে না ভবিষ্যতে তাদের সাথে কী ঘটতে চলেছে সেইসব ছেলেমেয়েরাও নিজেদের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে শিখবে ও নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য সেইভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
তাই এরূপ বিভিন্ন কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তানদের লাইফের বিভিন্ন পরিস্থিতি গবেষণা করে তা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য পন্থা ও পদ্ধতি নিয়ে এই বইটি লেখা হয়েছে। বইটি সে সকল ছেলেমেয়েদের উপকারে এলে আমাদের এই পরিশ্রম ও প্রয়াস সার্থক হবে।

বইটি প্রি-অর্ডার করতে বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'টাইম পাবলিকেশন্স' এর ফেসবুক পেজের মেসেজ ইনবক্সে মেসেজ করুন। সম্পূর্ণ বই লেখা হলেই আমরা আপনাকে রিপ্লাই দিবো।
টাইম পাবলিকেশন্স এর ফেসবুক পেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন

টাইম পাবলিকেশন্স | A Publication of Life Academy

Friday, March 12, 2021

Thursday, March 11, 2021

সম্পদের ঔদ্ধত্য এবং আমরা


আমি যদি ফিদেল কাস্ত্রোর মেয়ের নাম- ঠিকানা জানতাম তাহলে তাকে চিঠি লিখে বলতাম, "তুমিই ভুল, তোমার বাবাই ঠিক ছিল"।
আমি ব্যক্তিগতভাবে অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে হলেও সমাজতন্ত্রের মতো একটি বদ্ধ ব্যবস্থার গুণগান কেনো গাইছি তা এই লেখায় ব্যাখ্যা করবো।

যে আমেরিকা ৬৩৮ বার ফিদেল কাস্ত্রোকে মারার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় ফিদেল কাস্ত্রোর মেয়ে বাবার উপর অভিমান করে দেশ ছেড়ে সেই আমেরিকাতে গিয়ে বসবাস করছে, সে ধনতন্ত্রের সমর্থক, অবাক ব্যক্তিস্বাধীনতার সমর্থক। কিন্তু আমরা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে এই কাল্পনিক অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বাদ কতটা পাচ্ছি তাই এখন দেখার বিষয়। আসুন দেখে নিই আমরা সেই অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতার সুখ কতটা পাচ্ছি!

অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে বুঝায় গণতন্ত্র। উন্নত বিশ্বের গণতন্ত্র সফল, কিন্তু অনুন্নত বিশ্বে গণতন্ত্র এক মেরুদণ্ডহীন স্বপ্নের নাম; যে স্বপ্নের শুরু জন্মের পরে আর মৃত্যুর পূর্বেও তার স্পর্শ লাভ করার সৌভাগ্য আমাদের হয় না।

অনুন্নত বিশ্বে গণতন্ত্র সর্বসাধারণের স্বাধীনতা নয় বরং পরিণত হয়েছে মুষ্টিমেয় অভিজাত শ্রেণির অতি অবাধ স্বাধীনতা লাভের হাতিয়ারে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্র উদ্ভব হয়েছে কতৃত্ববাদের। আর শুধু এই কতৃত্ববাদীরাই লাভ করছে সেই অবাধ মুক্ত ব্যক্তিস্বাধীনতা। আর বাকিরা পরিণত হয়েছে তাদের পীড়নের শিকারে।

অনুন্নত বিশ্বের ব্যর্থ গণতন্ত্র আমাদেরকে জাতীয় জীবনে উপহার দিয়েছে আইনশৃঙ্খলার দুর্গতি ও বিচারহীনতা। ফলে নিরাপত্তার শঙ্কা এবং মতামত প্রকাশের ও অন্যয়ের প্রতিবাদের ক্ষেত্রেও হামলার ভয়। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে হারিয়ে গেছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। তাহলে আর সুস্থ নাগরিক জীবনের কোন জিনিসটা বাকি থাকলো?

অনুন্নত বিশ্বে যেখানে আমার ব্যক্তিসম্মান নাই, জানমালের নিরাপত্তা নাই, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই, সুবিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা নাই সেখানে কাল্পনিক ব্যক্তিস্বাধীনতা দিয়ে আমি কী করবো?

সমাজতন্ত্রের দেশগুলোতে বেকারত্বের সমস্যা থাকেনা। তারা বেকার সমস্যা সমাধানে কী ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকে তা চীন, রাশিয়া, কিউবার ইতিহাস পড়লে বুঝতে পারবেন। তাই তাদের তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনাময় সময়টা আনপ্রডাক্টিভ কাজে ব্যয় হয় না, সেটার সদ্ব্যবহার হয়। আর অনুন্নত বিশ্বের ব্যর্থ গণতন্ত্রের দেশে নিয়োগ বোর্ড ও সরকারি কোষাগার বেকারদের রক্ত চুষে জোঁকের মতো ফুলে ফেপে উঠে। তরুণদের সম্ভাবনাময় সময়টা ব্যয় হয় বেকারত্ব নামক হতাশায়।

এসব তো গেলো বড় পরিসরের কথা। এখন আরেকটু গভীরে ঢুকি, পরিবারে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারী হওয়ায় ক্ষমতায় পরিবারের কর্তা কতৃত্ববাদী হয়ে উঠে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর; হয় নারী নির্যাতন ও শিশু নির্যাতন অধিকন্তু শিশুদের উপর মানসিক নির্যাতন।
ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষকে পাশবিক করে তোলে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির কারণে পাওয়ারফুল হয়ে স্বামী স্ত্রীকে নির্যাতন করে, বাবা-মা সন্তানকে নির্যাতন করে। আমি মোটেও গাঁজাখুরি কথা বলছি না, নিজ চোখে দেখা বাস্তবতা তুলে ধরছি।

এবার এর সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে বলি। এর ফলে সমাজের বিত্তশালীরা কতৃত্ববাদী ও চড়াও হয়ে উঠে সমাজের সাধারণের উপর। বিষয়টা বুঝানোর জন্য প্রথমেই একটা গল্প বলে নিই-
আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম। মেয়েটার পরিবার বিদেশে (মধ্যপ্রাচ্যে) ওডজব করে অনেক টাকার মালিক হয়। ফলে তারা বিনয়ী হওয়ার পরিবর্তে কতৃত্ববাদী হয়ে উঠে। সেই সময়ে তারা এক পয়সাওয়ালা বরের সন্ধান পায় ও যেও মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে ধনী হয়েছিল। তার সাথেই মেয়েটার বিয়ে হয়। তারা জানতো ছেলেটা এইচএসসি পাশ, কিন্তু ঘটক ঘুষ খেয়েছিল। ছেলেটা কোনো পড়াশুনাই করেনি। অন্যদিকে মেয়েটা এইচএসসি পাশ করে ভর্তি প্রত্যাশী। ফলে বিয়েটা টেকেনি।
যাহোক ডিভোর্সের পরেও আমি মেয়েটাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। তখন মেয়েটার নানা আমাদের গ্রামে এসে কিছু লোকের কাছে আমাদের সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলে গেছে। আমি নাকি তাদের মেয়ের যোগ্যই নই। অথচ তাদের মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফরম তোলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি। আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও তার যোগ্য নই! আর একজন এইচএসসি পাশ করেই তার যোগ্য ছিল, কারণ তার টাকা ছিল।
আমার এক বন্ধু একবার আমাকে বলেছিল, "একটা বিষয় দেখো, তুমি ভালো না মন্দ সমাজে তা নির্ণয় করা হবে তোমার সম্পদ দিয়ে। মনে করো তুমি একটা পরিচিত লোককে তাদের মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলা তাহলে সেই লোকটা কী করবে জানো?
যদি তোমার সম্পদ না থাকে তাহলে সেই লোকটা অন্যদের কাছে বলে বেড়াবে, অমুকের ছেলেটাকে ভালো ভেবেছিলাম কিন্তু এ ভিতরে ভিতরে এত খারাপ ভাবতেও পারিনি...; আর যদি তোমার সম্পদ থাকে তাহলে বলবে, যাক বাহে পরিচিতর মাঝেই একজন ভালো ছেলে পেলাম, আর দূরে যাই কেনো? এখানেই বিয়েটা দেই।
তার মানে তুমি ভালো নাকি মন্দ তা ঠিক করা হচ্ছে তোমার সম্পদের উপর ভিত্তি করে, সততার উপর ভিত্তি করে নয়।"
এভাবেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষের মানবিক বোধগুলোকে ধ্বংস করছে; মানুষ কতৃত্ববাদী ও অমানুষ হয়ে যাচ্ছে।

উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা বইয়ে কোনো এক গল্পে একটা উক্তি পড়েছিলাম- "হাতে বন্দুক থাকলে নিরীহ মানুষেরও চোখ পড়ে পশুপাক্ষীর দিকে"। ঠিক তেমনি অনুন্নত বিশ্বে গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উপহার ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষকে কতৃত্ববাদী করে তোলে আর শুধু কতৃত্ববাদীরা সুবিধা ভোগ করে।

ফলে ব্যক্তির কেনো সম্পত্তি থাকবে? সম্পত্তি থাকবে রাষ্ট্রের ও রাষ্ট্র তার নাগরিকদের পারফরমেন্স অনুযায়ী তাকে আরও ভালো করার জন্য বোনাস ও সাপোর্ট দেবে। এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠিত হবে।

তবে এটা ঠিক যে, আমাদের এসব কথা শুধুই ভুতের বকুনি। আমাদের আবস্থা প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া গরুর মতো। দেশে যতই উন্নয়ন উন্নয়ন গীতের ক্যাসেড বাজুক না কেনো নাগরিকদের মনে স্বস্তি না থাকলে এসব অর্থহীন।

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



লাইফের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ-পরামর্শ পেতে লাইফ একাডেমির অ্যাডভইস ডেক্সে আসুন। আর Advice Desk এর ওয়েবসাইটের হোমপেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন

সুন্দর জীবনের জন্য পরামর্শ | Advice Desk

Thursday, January 14, 2021

যে কারণে কেয়ার করার মতো কেউ নেই আমার!


জীবনের একটি রূঢ় বাস্তবতা হলো, তোমার স্বপ্নের বিষয়ে কিংবা কোনো বৃহৎ কাজের উদ্যোগে তোমাকে পাম দেওয়ার ও প্রশংসা করার অনেক লোক থাকবে, আবার তুমি প্রত্যাশা মাফিক তা করতে না পারলে তোমার সমালোচনা করার লোকও থাকবে এবং সান্ত্বনা দেওয়ার লোকেরও অভাব হবে না। কিন্তু সেই কাজে তোমাকে হেল্প করার মতো, তোমার পাশে থাকার মতো একজনকেও পাবে না।
লাইফের এসব রূঢ় বাস্তবতা আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি এবং এখনও দেখছি।
এর কারণ কী জানেন? ফর্মালিটিস। এসব করতে তো আর কোনো প্রয়াস প্রয়োজন হয় না, শুধু অল্প একটু সময় দিলেই হয়। আর আমি এসব ফর্মালিটিস করি না বলে আমি অভদ্র মানুষ; আমি যা করি তা সারপূর্ণ মূল কাজটা করি, আর তা না পারলে এসব ফর্মালিটিস ধরণের অসার কাজ আমি করি না।
তুমি পারবে, এগিয়ে যাও, তোমার পাশে আছি এ সে হ্যান ত্যান— এসব ফর্মালিটিস কথাবার্তা যারা বলে প্রয়োজনের সময় হ্যাজাক লাইট লাগিয়েও তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না; এটাই বাস্তবতা।
আমি জীবনে বহু বৈচিত্রপূর্ণ কাজ করেছি ফলে মানুষের মেন্টালিটি ও ক্যারেক্টারের উপর অনেকটা পিএইচডি করে ফেলেছি। শুধু সার্টিফিকেটটা পাইনি, এই আর কি!
এমনও লোক আছে যারা কাছের মানুষ হয়ে বাঁশ দেয়, আবার দয়ালু-সাধু সেজে এসে সান্ত্বনাও দেয়।
আমি বিশ্বাস করি আপনি যদি কাউকে সাহায্য না করে থাকেন তবে তার কাজের গুণগত মান সম্পর্কে সমালোচনা করার অধিকার আপনার নাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল খারাপ খেললে আপনি তার সমালোচনা করতে পারেন, কারণ যে করের টাকার সরকারি কোষাগার থেকে তারা বেতন পায় সেখানে আপনিও কর দেন; সরকার কোনো অসংগতিপূর্ণ কাজ করলে আপনি তার সমালোচনা করতে পারেন; কারণ আপনিও রাষ্ট্রের জন্য কর দেন। কিন্তু কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে কোনো সামাজিক কাজ করলে তার কাজের মান সম্পর্কে সমালোচনা করার অধিকার আপনার নাই। কেউ তার বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে খেতে ডাকলে সেখানে খাবারের মান খারাপ হলে সে বিষয়ে সমালোচনা করার অধিকার আপনার নাই, আপনি খেলে খান, না খেলে উঠে যান।
অথচ, অধিকাংশ মানুষ অনধিকারচর্চামূলক পরচর্চা করে অমৃতরস আস্বাদনের মতো স্বাদ পেয়ে থাকেন।
'শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে'— তেমনি সমালোচনা করা তারই সাজে সাহায্য করে যে।

আরও একটি রূঢ় বাস্তবতা হলো, এ জগতের মানুষ সবাই স্বার্থবাদী এবং তারা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো স্বার্থবাদীতার বিভৎস রূপটাকে ঢেকে রাখার জন্য যুক্তি ব্যবহার করে।
জানতে চাও কীভাবে? তাহলে শুনো— অন্য মানুষের কথা পরেই থাক, বাবা-মা যাদেরকে আমরা নিঃস্বার্থ বলে জানি তাদের হিসাবটা ধরেই অঙ্ক মেলাই এসো। ধরে নাও কোনো দুজন সমবয়সী ছেলেমেয়ে প্রেমে পড়েছে; তারা বিয়ে করতে চায়। এখন কোনো পরিবারই এটা মেনে নেবে না; এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো— বিয়ে হলে তারা আর পড়াশুনায় ভালো করতে পারবে না, তাদের লাইফের উন্নতি ধ্বংস হয়ে যাবে। কী মনে হয়? আসলেই এটা কি বাস্তব যুক্তি? মোটেও না, এটা হলো স্বার্থবাদীতাকে ঢেকে রাখার যুক্তি আর সেটাই এখন ব্যাখ্যা করা যাক। ইন্টারমিডিয়েটে বিয়ে করেছিল কিংবা অনার্স লাইফে বিয়ে করেছিল এরূপ যাদেরকে আমি দেখেছি তাদের কাউকেই দেখি নাই যে বিয়ে করার কারণে তারা সফল হতে পারে নাই। এক্ষেত্রে ছেলের পরিবার এটা মেনে নিতে চায় না কারণ ছেলের বাবা-মা চায় ছেলে চাকরি করে টাকা জমিয়ে তারপর বিয়ে করুক, তাদেরকে যাতে টাকা খরচ করতে না হয়। অর্থাৎ কেউ কারও জন্য স্বার্থ ছাড়া হিসেবের বাইরে কোনো খরচ করতে চায় না, এটাই সত্য; সে বাবা-মা যেই হোক না কেনো। অন্যদিকে একজন অধ্যয়নরত ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে হলে লস্ কারণ একজন প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে বিয়ে হলে তার থেকে যেসব পাওয়ার প্রত্যাশা থাকে এক্ষেত্রে সেসব থাকে না। অলরেডি প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে বিয়ে হলে মাঝেমাঝেই এটাসেটা পাওয়া তো যায় অনেক কিছু পাওয়ার প্রত্যাশাও করা যায়।
তাই আমরা মেয়েকে সুখী দেখতে চাই বলে এই সম্পর্ক মেনে নিবো না, এটা হলো মেয়ের পরিবারের স্বার্থ ঢেকে রাখার যুক্তি। আর ছেলের পরিবারের যুক্তি হলো ছেলে তো আয় ইনকাম করে না, বউকে কী খাওয়াবে? পরিবারে যদি নিজের তিনটা মেয়ে থাকে তাদেরকে সারাজীবন তথা ১৮-২৪ বছর বয়স পর্যন্ত লালনপালন করা এবং বিয়ে দেওয়া সবই করা যার কিন্তু ছেলে বিয়ে করতে চাইলে অন্য একটা মেয়ে তাদের কাছে খুব বেশি হয়ে যায় তাকে ৩-৪ বছর সাপোর্ট দেওয়া যায় না, কারণ সেটা লস প্রজেক্ট; ছেলে সুখী হোক এই চাওয়াটা মনে আসে না, কিছুদিন একটু বেশি সম্পদ খরচ হবে সেই চিন্তা মাথায় ঢুকে অন্তরে কষ্ট বেজে ওঠে। আসল কথা হলো স্বার্থ। পিতামাতা সন্তানের মঙ্গলের জন্য সবকিছু করে, এটা ভুয়া কথা। তাদের স্বার্থ বজায় রাখতে যতটুকু করা দরকার ততটুকু তারা করে, তার বেশি এক বিন্দুও নয়। এই পৃথিবীতে কেউই স্বার্থের ঊর্ধ্বে নয়।

বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকায় নতুন প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় কলকাতার হিন্দুরা অফিস আদালতের ফি, আইন ব্যবসা ও তদসংশ্লিষ্ট আবাসিক হোটেল ব্যবসা, কর-রাজস্ব আদায় এবং ব্যবসাবাণিজ্যের একচেটিয়া সুবিধা হারায়— তাদের এই স্বার্থহানীই ছিল তাদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধিতার মূল কারণ। কিন্তু সেকথা বলে তো আর আন্দোলন করা যায় না, তাই তারা যুক্তি দেখালো যে— বাংলা আমাদের মা, বাংলাকে ভাগ করা মানে বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ করা এবং এটি একটি পাপ কাজ।
অথচ, সেই হিন্দুরাই ভারত বিভাগের প্রাক্কালে ১৯৪৬ সালে অখণ্ড বাংলা গঠনের বিরোধিতা করে তা ভেস্তে দিয়েছিল; এই ছিল বাংলা মায়ের প্রতি ভক্তির নিদর্শন।
রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মনীতি এসব কোনো নীতিতেই নয়, এই পৃথিবী চলে একটা নীতির উপরে, সেটা হলো 'স্বার্থনীতি'। আর স্বার্থনীতির কুৎসিত রূপ ঢেকে রাখতে ব্যবহৃত হয় যুক্তি।
ব্যক্তিজীবনেও মানুষ এই কাজটাই করে থাকে।

কাছের মানুষ তথা অংশীদারীত্বের সম্পর্কযুক্ত এরূপ কাউকে আপন মনে করে তার কাছে কোনো বিষয়ে পরামর্শ চাইলে সে কখনও সুপরামর্শ দেয় না। বরং সে সুদূর ভবিষ্যৎ পর্যন্ত চিন্তা করে তার নিজ স্বার্থ অটুট রাখতে সে বিষয়ে যেভাবে পরামর্শ দেওয়া দরকার সেভাবে পরামর্শ দেয় এবং সে সম্পর্কিত উদাহরণ ও যুক্তি দিয়ে কনভিন্স করে ফেলে।

আমি সারাজীবন স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখে এসেছি এবং এখনও দেখছি। স্বার্থবাদীতার বিভৎস রূপটাকে আমি বেশ ভালো করে দেখেছি। যদিও মানুষজাতি সেটাকে যু্ক্তি নামক খোলস পরিয়ে ঢেকে রাখে তবুও তা আমার নজর এড়ায়নি। অনেক ধর্মগুরুকে দেখেছি নিজ স্বার্থের জন্য উল্টাপাল্টা ফতোয়াবাজি করতে। প্রার্থনালায়েও ধর্মগুরু কর্তৃক চাঁদাবাজি হতে দেখেছি।
এমনকি আমার মাতৃপক্ষের আত্মীয়স্বজনদের হীনস্বার্থবাদীতার নোংরা খেলায় বলির পাঠা হয়ে নিজের লাইফটাকে তছনছ লণ্ডভণ্ড হতে দেখেছি আমি।

সুতরাং আর কাকে সম্মান করবো আমি? আর কাকে ভালোবাসবো আমি? হু ইজ দ্যাট পার্সন?
আমিও যে মানুষ; আমারও যে দুঃখ-কষ্ট নামক অনুভূতিগুলো আছে সেটা তো কেউ মনেই করে না।
আমাকে কেয়ার করার কেউ নেই, আমাকে ভালোবাসার কেউ নেই, আমার পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। সো আই ডোন্ট কেয়ার এ্যানিওয়ান ইলস্।

© লেখক : মেহেদী হাসান।
বই : আই ডোন্ট কেয়ার (লেখা চলছে)।



লাইফের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ-পরামর্শ পেতে লাইফ একাডেমির অ্যাডভইস ডেক্সে আসুন। আর Advice Desk এর ওয়েবসাইটের হোমপেজে যেতে এখানে—ক্লিক—করুন

সুন্দর জীবনের জন্য পরামর্শ | Advice Desk